প্রচ্ছদ ›› বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাটি পরীক্ষা সহজলভ্য করবে ‘মাটির প্রাণ’

১৫ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:২৯:২৯ | আপডেট: ২ years আগে
মাটি পরীক্ষা সহজলভ্য করবে ‘মাটির প্রাণ’
খুব সহজেই মাটির আর্দ্রতা, PH, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম পরিমাপ করবে ‘মাটির প্রাণ’ নামক যন্ত্রটি

হাসান আরিফ

মাটি পরীক্ষাকে আরও সহজ ও সহজলভ্য করতে উদ্ভাবিত হয়েছে ডিজিটাল পোর্টেবল সয়েল টেস্টিং ডিভাইস, যা তাৎক্ষণিকভাবে মাটি পরীক্ষার সমাধান প্রদান করতে প্রস্তুত। কৃষকদের জন্য মাটি পরীক্ষা আরও আরামদায়ক এবং সহজ করে তুলবে ডিভাইসটি।

নতুন এই ডিভাইসটি মাটির আর্দ্রতা, PH, নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়াম পরিমাপ করবে এবং মাটি পরীক্ষার ফলাফল মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সরবরাহ করবে, যা তাৎক্ষণিকভাবে মাটির বর্তমান অবস্থা জানাবে।

এছাড়াও মাটির জন্য সার এবং মাটির অন্যান্য উপাদান যেমন- PH, নাইট্রোজেন এবং ফসফরাসের পরিমাপ এবং বিভিন্ন প্রকার সার ব্যবহারের পরামর্শ দেবে।

আইসিটি বিভাগ “মাটির প্রাণ” (মাটির জীবন) নামের ডিভাইসটি চালু করার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থায়ন করেছে। এ প্রকল্পটি বর্তমানে পাইলট পর্যায়ে রয়েছে এবং আগামী বছর উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বর্তমানে মাটি পরীক্ষার জন্য সারা দেশের ২০ থেকে ২৫ টি মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করতে হয় কৃষকদের, যা একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় এবং অর্থ খরচ করে। খরচ সত্ত্বেও মাটি পরীক্ষার ফলাফল আসতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে, যা কৃষকদের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করে।

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক তিন শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আরাফ, রাহাত উদ্দিন এবং রেজাউল খান মিলে নতুন এই ডিভাইসটি আবিষ্কার করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মোশাররফ হোসেন দ্য বিজনেস পোস্ট'কে বলেন, এই ধরনের উদ্ভাবন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে মূল বিষয় হলো এটিকে শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা কারণ অনেক উদ্ভাবন শেষ পর্যন্ত টিকতে পারে না।

এছাড়াও মাটির প্রাণ অ্যাপ্লিকেশনটি কৃষকদের জন্য তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করবে। অনেক সময় কৃষকরা ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়ে থাকেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা বুঝতে পারে না। অ্যাপটি তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিত করবে এবং কৃষকরাও স্বাস্থ্য সুরক্ষা অনুসরণ করে কীটনাশক ব্যবহারের নির্দেশাবলী পাবে।

কৃষকরা এই অ্যাপটি ব্যবহার করে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন এবং পরবর্তীতে এলাকার সামগ্রিক চাষাবাদ সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য পাবেন।

থাইল্যান্ড শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আমন্ত্রিত হওয়ার পর একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রকল্পটি প্রদর্শন করেছেন ডিভাইসটির উদ্ভাবকরা এবং সাতটি দেশের মধ্যে “বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড”-এ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।

২০১৯ সালে এই প্রকল্পের জন্য সরকারি অনুদানের আবেদন করেছিলেন উদ্ভাবকরা। এসময় আইসিটি বিভাগ ৬ লাখ টাকা প্রদান করেছিল।

ছাত্রদের পরামর্শদাতা হিসেবে এই প্রকল্পটিতে কাজ করছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) অধ্যাপক ড. খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, মাটির প্রাণ একটি মানসম্পন্ন প্রকল্প এবং এই অ্যাপটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হবে, কৃষক যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে এবং ঢাকায় সরাসরি তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারে।

উদ্ভাবকরা বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে তারা ব্যক্তিগত খরচে গবেষণা করেছেন। তবে এ ধরনের গবেষণার জন্য ভালো মানের ল্যাবরেটরি প্রয়োজন এবং অনেক যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়। তাই ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) সভাপতি এসকেএম হামিদ আইডিইবিতে গবেষণার জন্য তাদেরকে একটি ইন্টারনেট অব থিংস এবং রোবোটিক্স ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ আল আরাফ বলেন, ডিভাইসটির উৎপাদন খরচ ৮ হাজার টাকা, যা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস থেকে একটি নিবন্ধন পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তারা শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পেটেন্ট অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন।

চূড়ান্ত পর্যায়ে এটি আইসিটি বিভাগে উপস্থাপনা করা হবে। এরপর কৃষি মন্ত্রণালয় থেকেও অনুমোদনের জন্য আবেদন করবেন তারা।

সারাদেশে কৃষকদের মধ্যে প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে এই প্রকল্পে বিনিয়োগের অনুরোধও জানান উদ্ভাবকরা।