প্রচ্ছদ ›› স্বাস্থ্য

ফের করোনার মাথাচাড়া

রোগী বাড়ছে হাসপাতাল ও আইসিইউতে

১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৩:২৭:৩০ | আপডেট: ২ years আগে
রোগী বাড়ছে হাসপাতাল ও আইসিইউতে

আরিফুর রহমান রাব্বানী

ফের বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। এতে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। অবশ্য, এখন পর্যন্ত বেড খালি রয়েছে অর্ধেকেরও বেশি।

সম্প্রতি সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকেই হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়তে থাকে। শ্বাসকষ্ট, কাশি, জ্বর ও শরীরে ব্যথাসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে যারা আসছেন, তাদের বেশিরভাগেরই করোনা শনাক্ত হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে ৮ হাজার ৪০৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩.৯৮ শতাংশে। দিন দিন সংক্রমণের হার বাড়লেও হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ এখনো কম।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, এক মাসের আগের তুলনায় রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, প্রতিদিন ১০ জনের বেশি ভর্তি হচ্ছে।

তিনি বলেন, “মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪ শয্যার বিপরীতে ৭৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও, ২১২টি আইসিইউ শয্যার বিপরীতে আমাদের ২০টি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) রোগী রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “যারা কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন, তাদের শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য কোভিড-সম্পর্কিত জটিলতা থাকলেই ভর্তি করা হচ্ছে। যদি অন্য কোন সমস্যা না থাকে, তাদের চিকিৎসা দেয়া হয় এবং বাড়িতে আইসোলেশন করতে বলা হয়।”

গত ১৪ দিনে সারা দেশে হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পর, স্বাস্থ্য পরিষেবা অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) জানিয়েছে, ৪ জানুয়ারী পর্যন্ত সারা দেশে ১৩ হাজার ৩৬৯টির বিপরীতে ১২ হাজার ৬৯১টি শয্যা খালি ছিল।

১১ জানুয়ারি ১৩ হাজার ৪২৬টির বিপরীতে শয্যা খালি ছিল ১২ হাজার ৫০৬টি। ১৭ জানুয়ারি ১৩ হাজার ৪৩৭টির বিপরীতে ১২ হাজার ১৬৫টি শয্যা খালি ছিল। এছাড়াও ৪, ১১ এবং ১৭ জানুয়ারি যথাক্রমে আইসিইউতে রোগী ভর্তি ছিল ১৪২, ১৫৭ এবং ১৭৬ জন।

তথ্য বলছে, যদিও অর্ধেকেরও বেশি শয্যা এখনও খালি রয়েছে, ডিজিএইচএস অনুসারে গত ১৪ দিনে রোগী ভর্তি বেড়েছে।

ওই করোনা রোগীর ছেলে গোলাম হোসেন জানান,“কয়েকদিন আগে তার ৬০ বছর বয়সী মায়ের জ্বর ও শরীরে ব্যথা ছিল। টেস্টে তিনি পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ডিএমসিএইচ) কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। এখন তিনি ভালো আছেন।”

ডিএমসিএইচ-এর তথ্যানুসারে, ১১ থেকে ১৮ জানুয়ারী পর্যন্ত প্রতিদিন যথাক্রমে ২৩, ৩৪, ২৬, ৩০,২৪ এবং ২৮ জন করোনা রোগী ভর্তি হয়।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাজমুল হক মঙ্গলবার বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৮০ জন রোগী এসেছেন এবং তাদের মধ্যে ২৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। ২৫ জনের মধ্যে ১৮ জন ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। মোট, প্রায় ১২০ জন কোভিড-১৯ রোগী এবং ২৮২ জন করোনার সন্দেহভাজন ব্যক্তি এখন আমাদের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।”

তিনি বলেন, “পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তে থাকায় ভবিষ্যতে রোগীর সংখ্যা বাড়বে। এতে হাসপাতালের সক্ষমতাও কমে যাবে। এই পরিস্থিতি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।”

তাহের মৃধা নামে একজন ব্যাংকার বলেন, তার কোনো উপসর্গ নেই, তবে তার কর্মক্ষেত্রের আদেশ মেনে পরীক্ষা করাতে হয়েছে, এতে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

তিনি জানান, গত বছরও তিনি সংক্রমণে আক্রান্ত হন। তিনি পরে সুস্থ হয়ে দুটি টিকার ডোজ নেন। আমি এখন অসুস্থ বোধ করছি না। এ কারণে আমি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছি না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে এটি এখনও তেমন ছড়ায়নি, তবে আশঙ্কা রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শরফুদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “সারাদেশে সদ্য শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বলে জানা গেছে।”

তিনি বলেন, “হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের কাছ থেকে সংগৃহীত নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে ১০০ শতাংশ রোগীর মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সনাক্ত করা হয়েছে।

সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলে এক মাস পরে হাসপাতালের শয্যা পাওয়া যাবে না।”

তিনি আরও বলেন, “করোনার বিস্তার রোধ করতে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।”