প্রচ্ছদ ›› রাজনীতি

জীবন-জীবিকার গতি ফেরাতে প্রস্তাবিত বাজেট ব্যর্থ: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ জুন ২০২১ ১৫:৪৯:১৭ | আপডেট: ২ years আগে
জীবন-জীবিকার গতি ফেরাতে প্রস্তাবিত বাজেট ব্যর্থ: ফখরুল

করোনাকালে মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনার গ্রহণে প্রস্তাবিত ঢাউস সাইজের বাজেট সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি।

শুক্রবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের ৩৪ দিক তুলে ধরে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির মহসচিব বলেন: এক দশকের অধিককাল ধরে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি ও ক্রনিক্যাপিটালিজম’র মাধ্যমে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে সীমাহীন দুর্নীতি করে এক নজিরবিহীন অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে, যাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নাই। সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ অর্থনীতির অঙ্গীকার এ বাজেটে অনুপস্থিত।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন: দুর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টির মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে একটি বৈষম্যহীন, জনবান্ধব, কল্যাণমুখী ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করছি।

তিনি বলেন, অপরিকল্পিত লকডাউনের নামে শাটডাউনে চূড়ান্ত রকম থমকে যাওয়া নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন-জীবিকার কথা মাথায় না রেখে কেবলমাত্র অর্থনীতির নানা তত্ত্ব ও বিশাল সংখ্যার আর্থিক উপস্থাপনার মাধ্যমে কার্যত জনগণের সাথে এক ধরনের ভাওতাবাজি করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ বাজেট একটি অবাস্তবায়নযোগ্য কাল্পনিক ও কাগুজে বাজেট ছাড়া আর কিছুই নয়- এটি গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন: স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশের মধ্যেই আছে- এ খাতের চাহিদা মিটবে না। স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করতে হবে। করোনার টিকা প্রদানের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন: জনগণকে কোভিডের মহাসংকট থেকে রক্ষার দিকনির্দেশনা নেই, এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। বিদেশি ঋণ জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে পরিশোধ করা হবে।

সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেনে মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন: ঘোষিত বাজেটে অপচয়, অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ হয়নি। বরং এই সরকারের সময় দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও আইনের শাসন এবং জবাবদিহির যে ঘাটতি রয়েছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাজেটে।

মহাসচিব বলেন: বাজেটটি দেশের ৫০ তম বাজেট। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সময় এটা। কিন্তু বাজেটে সে লক্ষে বড় কোনো সংস্কার পরিকল্পনার উল্লেখ নেই। আমরা বাজেট প্রস্তাবনার সব ধরনের নতুন উদ্যোক্তাদের পাঁচ বছর ট্যাক্সহলিডে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু সরকার এ বাজেট নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরুর প্রথম তিন বছর লাভ-লোকসান নির্বিশেষে ১০% উৎস কর আরোপের প্রস্তাব করেছে। বিনিয়োগ হবে কীভাবে? ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই তিন লাখ টাকা থাকছে। এটা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা উচিত বলে মনে করি।

প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ১৫% কর আরোপের প্রস্তাব করেছে। সরকার মানবসম্পদ উন্নয়নের কথা বললেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানের উপর ট্যাক্স আরোপ করে মূলত শিক্ষা সংকোচন নীতি গ্রহণ করল। বিএনপি সরকার সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা শুরু করে উচ্চ শিক্ষার প্রসার ঘটানোর সুযোগ করে দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানগুলো নন প্রফিট অর্গানাইজেশন। শিক্ষা খাতে জিডিপি'র ৫% বরাদ্দ করতে হবে, যোগ করেন ফখরুল।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন: বাজেটে অর্থমন্ত্রী দারিদ্রের হার ১২% নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন। কীভাবে দারিদ্রের হার কমানো হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা নেই এ বাজেটে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম এবং দক্ষিণ এশিয় নেটওয়ার্ক পরিচালিত জরিপ বলছে, ৪২ শতাংশ মানুষ এখন দরিদ্র। দেখা যাচ্ছে মধ্যবিত্তদের বড় অংশই নিম্নবিত্তের কাতারে চলে গেছেন। তাহলে দারিদ্রসীমা ১২% নামবে কীভাবে?