প্রচ্ছদ ›› বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মোবাইল ফোন পানিতে পড়ে গেলে করণীয়

টিবিপি ডেস্ক
১১ জুন ২০২২ ১৬:৫৫:১১ | আপডেট: ১ year আগে
মোবাইল ফোন পানিতে পড়ে গেলে করণীয়
সংগৃহীত

প্রায় সময় অনিচ্ছা সত্ত্বে বিভিন্ন দুর্ঘটনাবশত মোবাইল ফোনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম ঘটে। খুব সাধারণের মধ্যে মোবাইল ফোন পানিতে পড়ে যাওয়াটাই বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই চলুন, জেনে নেয়া যাক মোবাইল ফোন পানিতে পড়লে কি কি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

মোবাইল ফোনটি পানিতে পড়ে গেলে কি করবেন

অবিলম্বে ফোনটি সুইচ অফ করা- পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী হওয়ার কারণে যেকোন ভেজা বৈদ্যুতিক সার্কিট সমস্যার সম্মুখীন হতে বাধ্য। এক্ষেত্রে সুইচ অফ করা ফোনে বিদ্যুৎ না থাকায় ভেজা অবস্থার কাছে এটি ধরাশায়ী থাকে না। তবে বৈদ্যুতিক ডিভাইসটি ভিজে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে, এটি একদম অকেজো হয়ে গেছে। ভাগ্য ভালো হলে বড় কোন ক্ষতি হওয়ার আগেই ফোন বন্ধ হয়ে গেলে সম্ভাব্য জটিলতা সৃষ্টি হবে না।

যখন পানি ফোনের ভেতরে ঢুকে পড়ে তখন একটি বিদ্যুৎ বহন করে ফোনের অভ্যন্তরে প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়। ফলে ফোনটি বিদ্যুৎ-এ ওভারলোড হয়ে সার্কিট বোর্ড পুড়ে যায়।

কখনও কখনও পানি ফোনের দুর্বল অংশগুলোতে পৌঁছতে একটু বেশি সময় নিতে পারে। তবে দেরিতে হোক বা দ্রুত হোক; লবণাক্ত পানি মিঠা পানির তুলনায় ফোনকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে।

একটি হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে ফোনটা মুছে নেয়া- ব্যাপারটা মনে হতে পারে ভেজা ফোনকে আরও ভিজিয়ে দেয়া। কিন্তু আসলে ভেজা কাপড় মোবাইল ফোনকে ক্ষয়কারী বস্তুকে অপসারণ করতে সাহায্য করে। আজকাল বেশিরভাগ স্মার্টফোন স্যাঁতস্যাঁতে কাপড়ের সাথে মানিয়ে নিতে পারে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে যে কাপড়টি যেন একদম ভিজে চুপচুপে না হয়। মুছে নেয়ার পর ফোনের গায়ে বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ময়লা পানি আর থাকবে না।

মোবাইলের অপসারণযোগ্য যন্ত্রাংশগুলো খুলে ফেলা- মোবাইল ফোনটির সিম কার্ড, মাইক্রো-এসডি কার্ড এবং সম্ভব হলে ব্যাটারিও খুলে ফেলতে হবে। যন্ত্রাংশগুলো অপসারণের সময় ফোনটি আলতো করে নাড়াতে হবে যেন ভেতরের পানি বেরিয়ে যায়। এ সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন খুব ঝাকুনিতে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট্স খুলে না যায়। এভাবে ফোনের প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশের দুর্বল উপাদানগুলোতে পানি পৌঁছাতে বাধা দেয়া যায়। খুব সহজভাবে বলতে গেলে সমস্ত অপসারণযোগ্য অংশগুলো একটি শুকনো জায়গায় রেখে দেয়া ভালো।

পরিপূর্ণরূপে শুকিয়ে নিতে হবে- এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মোবাইল ফোন শুকানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

টিস্যু বা নরম তোয়ালে- টিস্যু বা তোয়ালে মৃদু এবং লিন্ট-মুক্ত হলে ভালো। তোয়ালে দিয়ে ফাটল বা ফুটোগুলো মুছার সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে। সিম কার্ড, মাইক্রো-এসডি কার্ড এবং ব্যাটারির মতো যন্ত্রাংশগুলো খুলে তোয়ালে দিয়ে মুছে নেয়া যায়। টিস্যুর ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে মুছার সময় বেশি চাপ লেগে টিস্যুর ছেড়া অংশ মোবাইলের ভেতরের কোন ফুটোর ভেতরে সেধিয়ে না যায়।

ভ্যাকুয়াম ক্লিনার- পানি শুষে নিতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করা যেতে পারে। টিস্যু বা তোয়ালে দ্বারা পরিষ্কার করা যায় না এমন অংশগুলোর জন্য এই কৌশলটি কার্যকর হতে পারে। একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার প্রতিটি বিটে বিটে পানি শুষে নিয়ে অধিকতর ঝুঁকির সম্ভাবনা হ্রাস করতে সহায়তা করে। এখানেও সতর্ক থাকা দরকার। কেননা খুব শক্তভাবে টেনে নেয়ার সময় ফোনটিকে দ্রুত নাড়াবে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ টেনে নিতে পারে।

মুছার সময় যে বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি

→ বাহ্যিক তাপের উৎস যেমন হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা যাবে না।

→ চার্জিং পোর্টের ভিতরে তোয়ালে, তুলো বা অন্য কিছু ঢোকানো যাবে না

→ ফোনের কোন বোতামে চাপ দেয়া যাবে না

→ ফোন জোরে ঝাঁকানো বা বেশি চাপ দিয়ে ঘষা যাবে না

→ ফোনের সামনে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে রাখা বা এতে ফুঁ দেয়া যাবে না

→ ফোনে চার্জ দেয়া যাবে না

সম্পূর্ণরূপে শুকানোর জন্য কমপক্ষে ২ দিন অপেক্ষা করতে হবে- স্মার্টফোনটি তোয়ালের উপর রেখে খোলা জায়গায় সূর্যের আলোতে রেখে দেয়া যেতে পারে। এসময় যদি অপসারণযোগ্য হয় তবে ফোনের পেছনের প্যানেলটি সরিয়ে উন্মুক্ত করে নিলে আরও ভালো। এতে হ্যান্ডসেটটি পুরোপুরি খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।

তবে ফোন সুইচ অন করার আগে একটু ধৈর্য্য ধরে ৪৮ ঘন্টা অপেক্ষা করাটা উত্তম। কেননা ফোনটি বাইরে শুকনো থাকার অর্থ এই নয় যে, এটি ভেতরেও সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে। ভেজা ফোন শুকানোর জন্য এক বাটি চালের ভেতর ফোনটি ডুবিয়ে দিতে হবে। চাল ফোনের ভেতরে আটকে থাকা আর্দ্রতা দূর করে। এটি ফোনটির ভেতরে-বাইরে উভয় অংশে নিশ্চিতভাবে সম্পূর্ণ শুষ্কতা দান করে।

চালের থেকে সিলিকা আরও কার্যকরি। সিলিকার মিনিপ্যাকগুলো জুতোর বাক্সে পাওয়া যায়। একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে এই প্যাকগুলো দিয়ে পূরণ করে ফোনটি এর ভেতর রেখে দেয়া যেতে পারে। সিলিকা এক ধরনের ডেসিক্যান্ট, যা জলের আর্দ্রতা শোষণ করে। তাই এটি ভেজা স্মার্টফোন শুকানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত। চাল বা সিলিকা যে পদ্ধতিই ব্যবহার করা হোক না কেন, মুল উদ্দেশ্য হলো- সমস্ত আর্দ্রতা অপসারিত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা। এর জন্য ফোনটিকে এভাবে কমপক্ষে ৪৮ ঘন্টা রেখে দিতে হবে।

প্রক্ষালন বা হালকাভাবে ঘষে পরিষ্কার করা- উপরোক্ত কোন পদক্ষেপে কাজ না হলে এটি শেষ অবলম্বন। পারত পক্ষে এই পদ্ধতি চেষ্টা না করা ভালো কারণ এটি ফোনকে আরও ক্ষতি করতে পারে। তাই যদি কিছুতেই কাজ না হয় তখন এই উপায়ে চেষ্টা করতে হবে একটু সতর্কতার সাথে।

ব্যাপারটি অনেকটা দাঁত মাজার মত। খুব বেশি জোরাজুরি করলে মাড়ি ক্ষতবিক্ষত হয়ে রক্ত বেরতে পারে। ফলে দাঁত পরিষ্কার তো দূরে থাক উল্টো হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।

ভেজা স্মার্টফোন প্রক্ষালনের ব্যাপারটিও ঠিক তাই। ফোনের যন্ত্রাংশগুলো একদম খুলে ফেলতে হবে। সার্কিট বোর্ড সম্পূর্ণভাবে নামিয়ে নিতে হবে। এবার ৯০ শতাংশের বেশি আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল দিয়ে একটি টুথব্রাশ ভিজিয়ে নিয়ে বোর্ডটি আলতো করে মাজতে হবে। কয়েক মিনিটের জন্য অ্যালকোহলে ফোনটি ডুবিয়ে তারপর মাজা যেতে পারে।

এখানে যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হলো- অ্যালকোহলে ফোনের আঠাগুলো দ্রবীভূত হয়ে যায়। এতে ফোনের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।

এবার ফোনটি ওপেন করে মনিটর করা- সব শেষে স্বভাবতই প্রত্যেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারি এই কাজটি করতে উদ্যত হবেন। ভাগ্য ভালো হলে শুকানোর সাথে সাথেই ফোন ঠিকঠাক কাজ করা শুরু করতে পারে। এমনো হতে পারে যে, কাজ করছে তবে এমন কিছু ত্রুটি দেখাচ্ছে যা আগে কখনোই পরিলক্ষিত হয়নি। সুইচ অন করার পর থেকে আগামী কয়েকদিন সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সাউন্ড, ফটো তোলা, ভিডিও ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে ফোনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে। এসময় কোন সমস্যা দেখালে ফোনের মেরামত বা খুটিনাটি যন্ত্রাংশের প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারে।