প্রচ্ছদ ›› খেলা

বিদায় কাতার, স্বাগত আমেরিকা

স্পোর্টস ডেস্ক
১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৫৯:০৮ | আপডেট: ২ years আগে
বিদায় কাতার, স্বাগত আমেরিকা

এক দশক আগে যখন বিশ্বকাপের স্বাগতিক স্বত্ব পেয়েছিল কাতার। মধ্যপাচ্য ও আরব দেশটিকে টুর্নামেন্ট আয়োজনের সুযোগ দেওয়া নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। এমনকি মহাযজ্ঞ শুরুর লগ্নেও সমালোচনার ঝড় থামেনি। নিন্দুকদের জবাবটা কি দারুণভাবেই না দিয়েছে কাতার। তাদের আতিথেয়তায় ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এতটাই মুগ্ধ হয়েছেন যে, কাতারে আয়োজিত টুর্নামেন্টকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল বিশ্বকাপ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

ইনফান্তিনোর এমন প্রশংসা অবশ্য অমূলক নয়। ছোট্ট একটি দেশের কাঁধে বিশ্বকাপ আয়োজনের বিশাল যে বোঝা ছিল তা দারুণভাবেই বহন করেছে। সফল, সুন্দর ও মনে রাখার মতো একটি বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছে কাতার। গতকাল রোমাঞ্চকর এ টুর্নামেন্টের পর্দা নেমেছে। শেষ হয়ে গেল আরও একটি বিশ্বকাপ। অপেক্ষা এখন ২৩তম বিশ্বকাপের। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের স্বাগতিক অবশ্য একক কোনো দল নয়। আমেরিকা মহাদেশের তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো যৌথভাবে আয়োজন করবে বিশ্বকাপের ২৩তম আসর। আজ থেকে গোটা ফুটবল দুনিয়া ওই বিশ্বকাপের দিনক্ষণ গোনা শুরু করবে।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সব সমর্থক যেন ভালোভাবে বিশ্বকাপ উপভোগ করতে পারেন তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে কাতার সরকার। পর্যটকদেন জন্য মেট্রো রেল, গণপরিবহন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে গ্যালারিতে উপস্থিত থাকা দর্শকদের বিশেষ উপহার দিয়েছে কাতার। কেবল বাইরের আতিথেয়তাই নয়, মাঠের লড়াইও উপহার দিয়েছে থ্রিলার। গ্রুপপর্ব থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্ট উপহার দিয়েছে রেণু ছড়ানো উত্তেজনা। এ বিশ্বকাপ দিয়েই কমে এসেছে ছোট-বড় দলের দূরত্ব। আফ্রিকান দলগুলো দাপট দেখিয়েছে। চমক দেখিয়েছে এশিয়া মহাদেশের দলগুলোও। এ দুটি দেশ মিলে ল্যাটিন আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান মহাদেশের দলগুলোর সঙ্গে টেক্কা দিয়ে লড়াই করে গেছে। যা বিশ্বকাপের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। সব মিলিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এবং রোমাঞ্চকর আসরই বলতে হচ্ছে কাতারের আয়োজনের। সোয়া দুশ বিলিয়ন ডলার যে কাতার এমনি এমনি করেনি সেটাও তারা বুঝিয়ে দিয়েছে ভালোভাবে।

এই বিশ্বকাপ হচ্ছে ৩২ দলের। ২০২৬ আসর থেকে টুর্নামেন্টে বাড়ানো হচ্ছে দলের সংখ্যা। ওই আসরে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যা দলে উন্নীত করার পরিকল্পনা ছিল ফিফা। কিন্তু কাতারের সফল আয়োজনের পর পরবর্তী বিশ্বকাপ নিয়ে আরেকবার ভাবনার কথা জানিয়েছেন ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো। শুক্রবার রাতে তিনি বলেছেন, ‘কাতারে গ্রুপে প্রতিটি দল অবিশ্বাস্য খেলেছে। এমনকি প্রতিটি গ্রুপের শেষ ম্যাচের শেষ মিনিট পর্যন্ত কেউ বলতে পারেনি শেষ ষোলোতে কে যাচ্ছে।’ কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপের শেষ ম্যাচগুলো প্রায় প্রতিটিই ছিল এক একটি ফাইনালের মতো। যেখানে দলগুলো নকআউট পর্বে উঠতে মরিয়া ছিল। এখানেই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় সফলতা। কারণ ওই ম্যাচগুলো ছিল দারুণ উত্তেজনায় ঠাসা এবং উপভোগ্য। ফিফা সভাপতি এমনটিই মনে করছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের পরের বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবতে হবে। নয়তো দলগুলোর ফরম্যাট নিয়ে অন্তত আলোচনা করতে হবে; যা পরবর্তী সভার আলোচ্যসূচিতে থাকবে।’

৩২ দলের বিশ্বকাপ চালু হয় ১৯৯৮ সাল থেকে। প্রতিটি গ্রুপে চারটি দল। আট গ্রুপের থেকে নকআউট পর্বে যেতে পারে ১৬টি দল। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল নিশ্চিত করে পরবর্তী রাউন্ড। সামনের আসর থেকে পাল্টাতে পারে টুর্নামেন্টের ফরম্যাটে। ৪৮ দলের বিশ^কাপ হলে গ্রুপে তিনটি করে দল নিয়ে ১৬ গ্রুপে ভাগ করা হবে। যার তিনটির মধ্যে একটি বিদায় নেবে গ্রুপ পর্ব থেকে। অন্য দুটি দল যাবে পরের রাউন্ডে।

বহুল আলোচিত বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে। টুর্নামেন্টের শিরোপা কার হাতে উঠেছে পাঠক এতক্ষণে জেনে গেছেন নিশ্চয়ই। বহু রঙ ছড়ানো বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ শেষ হয়েছে। থেমেছে ফুটবল-জড়। ঠিক সাড়ে তিন বছর পর আবারও বিশ্ব কেঁপে উঠবে। বিশ্বকাপ-জড়ে কাঁপবে গোটা দুনিয়া। বিশ্বকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছে স্বাগতিক তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো।