একবার ভাবুন তো! শচীন টেন্ডুলকার কিংবা ব্রায়ান লারা অবসর ভেঙে ফের হাতে তুলে নিয়েছেন ব্যাট। মারকুটে ব্যাটিংয়ে আবার বুদ হবে ক্রিকেটবিশ্ব। সনৎ জয়াসুরিয়া তৈরী হচ্ছেন চার-ছয়ের ফুলঝুরি ছোঁটাতে। শেন ওয়াটসন, মাখায়া এনটিনিরা গতির ঝড় তুলতে প্রস্তুত। আরমোড়া ভেঙে জন্টি রোডস ওয়ার্মআপ সেড়ে নিচ্ছেন অবিশ্বাস্য ফিল্ডিংয়ে চমকে দিতে। আহা! কী সময়টাই না কেটেছে এই তারকাদের ঘিড়ে!
নাহ। অবসর ভেঙে ফেরার সুযোগ বা সম্ভাবনা কোনটাই নেই। তবে প্রিয় তারকাদের ফের ব্যাট-বলের উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সুযোগ আসছে। ভারতে সড়ক দুর্ঘটনারোধে সচেতনতা বাড়াতে গত বছর থেকে শুরু হয়েছে রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ লিজেন্ডস ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। যেখানে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন দেশের লিজেন্ডস ক্রিকেটাররা।
আট দল নিয়ে এবার এই আসর শুরু হবে ১০ সেপ্টেম্বর। যেখানে গতবারের মতোই থাকছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব। গত বছর প্রথম আসরের শিরোপা নিজেদের ঘরেই রেখেছিল ভারতের সাবেকরা। মোহাম্মদ রফিকের নের্তৃত্বে বাংলাদেশ লিজেন্ডস লিগ পর্বের পাঁচ ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি। এবার অতীত ভোলাতে চায় বাংলাদেশ লিজেন্ডসরা।
গতবার রফিক ছাড়াও খেলেছেন খালেদ মাহমুদ। এ বছর এই দুই তারকাকে দেখা যাবে না দলে। কিছু পরিবর্তন এনে একটা দল ভারতের আয়োজকরাই করে দিয়েছে। দলটির কোচিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অভিজ্ঞ কোচ রাহুল শর্মাকে। নিজের দল নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন ভারতীয় কোচ। আর দলের অন্যতম অলরাউন্ডার মোহাম্মদ শরীফ দিয়েছেন ভাল ফলাফলের প্রতিশ্রুতি।
রাহুল শর্মা বলেন, এমন একটা দায়িত্ব দেয়ায় রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। আমি সত্যিই বাংলাদেশের সাবেকদের সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। মাঠের কাজ শুরুর প্রায় এক বছর আগে থেকেই এই দলটি গঠনের ব্যাপারে আমি কাজ করছিলাম। কোচ হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল একটা ব্যালেন্সড স্কোয়াড করা যেন আমরা প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করতে পারি।
এই আসর আয়োজনের মহৎ দিক তুলে ধরে রাহুল শর্মা বলেন, 'ক্রিকেটের মধ্য দিয়ে আমরা মানুষকে ট্রাফিক আইন যথাযথ অনুসরণ করার জন্য সচেতন করে দিতে চাই। এমন একটা মহতি চিন্তা থেকেই হচ্ছে এই আসর।'
রাহুল শর্মা গতবারের দল থেকে ছেঁটে ফেলেছেন সাত ক্রিকেটারকে। বাদ পড়েছেন মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাহমুদ, জাভেদ ওমর, হান্নান সরকার, নাফিস ইকবাল, রাজিন সালেহ ও মুশফিক বাবু। তাদের জায়গায় এসেছেন আটজন- অলক কাপালী, শাহাদাত হোসেন রাজীব, তুষার ইমরান, ধীমান ঘোষ, ডলার মাহমুদ, আবুল হাসান রাজু, ইলিয়াস সানী ও নাজমুস সাদাত। এর বাইরে গত বছর খেলাদের মধ্যে এবারও আছেন আব্দুর রাজ্জাক, আলমগীর কবির, আফতাব আহমেদ, খালেদ মাসুদ, মোহাম্মদ শরীফ, মেহরাব হোসেন অপি ও মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন। অন্য খেলার একজন বাধ্যতামূলক প্রতিনিধি হিসেবে এবারও আছেন হকি তারকা মামুনুর রশীদ।
গত আসরে ভারত, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের কাছে হারা বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ শরীফ বলেন, 'গত বছর আমি এই টুর্নামেন্ট খেলে এসেছি। সেবার আহামরি কিছু করতে পারিনি আমরা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোন ম্যাচেই আমরা জিততে পারিনি। গতবার আসলে আমরা টুর্নামেন্ট সম্পর্কে সেভাবে ভাল ধারণা নিয়ে যাইনি। ভেবেছিলাম সিনিয়র খেলোয়াড়দের একটা গেট টু টুগেদার হবে সেখানে। একটা ফ্রেন্ডলি আসর জাতীয় কিছু হবে।'
রোড সেফটি ওয়াল্ড সিরিজ আয়োজদের ধন্যবাদ জানিয়ে শরীফ বলেন, 'খেলা ছাড়ার পর আসলে সাবেকদের সেভাবে যোগাযোগ থাকে না। এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে আমরা এক সময় যাদের সঙ্গে একসঙ্গে খেলতাম, তাদের সঙ্গে আবার দেখা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে এক সময়ের তারকাদের আবারও খেলতে দেখার সুযোগটা ক্রিকেটপ্রেমীরা পাচ্ছেন।'
এ বছর দল সংখ্যা আট। যোগ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। তবে আসরের বড় আকর্ষণ শচীন টেন্ডুলকার। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে নের্তৃত্ব দেবেন ব্রায়ান লারা। অষ্ট্রেলিয়া খেলবে শেন ওয়াটসনের নের্তৃত্বে। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক রস টেলর। ইংল্যান্ডের হয়ে টস করবেন ইয়ান বেল। শ্রীলঙ্কার নের্তৃত্বে থাকছেন তিলকারত্নে দিলশান। দক্ষিণ আফ্রিকার কান্ডারি জন্ডি রোডস। বাংলাদেশের নেতৃত্ব অবশ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অলক কাপালী, তুষার ইমরান, শাহাদাত হোসেন রাজীব ও মোহাম্মদ শরীফের যে কোন একজনের উপর বর্তাবে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব।