প্রচ্ছদ ›› খেলা

আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না: তামিম

স্পোর্টস ডেস্ক
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:০৯:৫৯ | আপডেট: ১ year আগে
আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না: তামিম

ভারতের মাটিতে হতে চলা ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য মঙ্গলবার ১৫ সদস্যের দল দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। স্কোয়াডে নেই ওপেনার তামিম ইকবাল। তাকে দলে নেয়া, না নেয়া নিয়ে গত কয়েকদিনে যেসব আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, সেসব নিয়ে মুখ খুলেছেন তামিম। তার অভিযোগ বোর্ডের শীর্ষ পর্যায়ের দিকে। বললেন নোংরামির মধ্যে থাকতে চাননি। ওসবের চেয়ে দলের বাইরে থাকাই বেছে নিয়েছেন টাইগার ওপেনার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুধবার বিকেলে ভক্তদের উদ্দেশ্যে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তামিম। সেখানে খুলে দিয়েছেন মনের দুয়ার। বলেছেন আলোচনায় ওঠা প্রায় সব বিষয় নিয়েই। পাঠকদের জন্য যা হুবহু তুলে ধরা হল।

‘চোট থেকে ফিরে এমন কোনো অনুশীলন নেই যে, ফিজিওরা আমাকে করতে বলেছেন আর আমি করিনি। গত চার-পাঁচ মাসে আমি অনেককিছুই করেছি। আপনারা যদি আপনাদের নিজেদের লাইফের সঙ্গে সেটা মেলানোর চেষ্টা করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন। তবে সবকিছুর পর আমি যখন খেলা শুরু করি, প্রথম ম্যাচে ৩০-৩৫ ওভারের মতো ফিল্ডিং করেছি। আনফরচুনেটলি আমি সেখানে ব্যাটিং করতে পারিনি।’

‘পরের ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ এলো। আমার জন্য যেটা বেস্ট পসিবল আউটকামস দরকার ছিল, দুর্ভাগ্যবশত আমরা ম্যাচটি হেরে যাই। তবে ওই সময় আমার দরকার ছিল কিছুটা রান করা, ব্যাটিংটা কেমন হচ্ছে ফিল করা। যেভাবে ব্যাটিং করেছি তাতে অনেক খুশি ছিলাম। আমি মাত্র ৪৪ রান করেছি, তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম বড় কিছুর জন্য। তবে সেটি হয়নি দুর্ভাগ্যজনকভাবে। সে ম্যাচের পর আমি মানসিক দিক দিয়ে খুশি ছিলাম। যা শেষ ৪-৫ মাসে হয়েছে, সেগুলো মাথায় অতটা ছিল না সেভাবে। খেলতে মুখিয়ে ছিলাম আবার, বিশ্বকাপ খেলতে মুখিয়ে ছিলাম।’

‘সাধারণভাবে চোট কাটিয়ে এতদিন পর যখন ক্রিকেট খেলবেন তখন কিছুটা অস্বস্তিতে ভুগতে হবে এটাই স্বাভাবিক। আমার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। সত্যি বলতে প্রথম ম্যাচের পরেও আমি কিছুটা ব্যথা অনুভব করেছি। ম্যাচ শেষে আমি আমার অবস্থানটা ফিজিওকে জানিয়েছি। ঠিক ওই মুহূর্তে তিনজন সিলেক্টর ড্রেসিংরুমে আসে।’

‘আমি আপনাদেরকে একটা বিষয় ক্লিয়ার করে দিতে চাই যে, কোনো সময় আমি কাউকেই বলিনি যে পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারবো না। এই কথাটা কারো সাথেই হয়নি। আমি নিশ্চিত এ কথাটা গতকালকে নান্নু ভাইও ক্লিয়ার করেছে। এটা একটি মিথ্যা কথা এবং ভুল কথা। আমি জানি না কীভাবে এই কথাটি মিডিয়াতে ছড়িয়েছে। কে বা কারা করেছে এ বিষয়ে আমার কোনো আইডিয়া নেই। যেটা পুরোটাই ভুল জিনিস। আমি নির্বাচকদের বলেছিলাম, দেখেন আমার শরীরটা এখন এরকমই থাকবে, আপনারা যখন টিম সিলেক্ট করবেন এই জিনিসটা মাথায় রেখে সিলেক্ট করবেন। এটারও একটা কারণ আছে, আপনারা যদি কিছুদিন আগের কথা চিন্তা করেন, আমি যে ম্যাচ খেলার পর অবসর নেই, সেখানেও আমার চোটজনিত একটা সমস্যা ছিল। ওই রুমে ওই সময় আসলে ওভাবেই কথা হয়েছিল। আমি আলাদা কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইনি।’

‘আমি আবারো সততার সাথে বলছি যে, আমি ওই সময় নির্বাচকদের বলেছিলাম আপনারা চোটের বিষয়টি মাথায় রেখে আমাকে সিলেক্ট করবেন। কারণ যদি আমি বিশ্বকাপে যাই, এমনও হতে পারে আমি নয় ম্যাচ খেলতে পারবো কোনো সমস্যা ছাড়াই। কারণ ওয়ার্ল্ড কাপের শিডিউলেও আমাদের টানা ম্যাচ নেই। একেকটা ম্যাচের পর তিন-চারদিন করে গ্যাপ রয়েছে। আর এমনটা হতে পারে যে, দুই ম্যাচ খেলার পর চোটে পড়ে গেলাম। কারণ যে কেউই তো চোটে পড়তে পারে। বিশকাপের মাঝে এমনকিছু হলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর রিপ্লেসমেন্ট তো অবশ্যই নেয়া যায় যদি কেউ চোটে পড়ে। যে কারণে এই জিনিসটা আমি ক্লিয়ারলি তাদেরকে বলে দেই।’

‘এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়, ফিজিওর রিপোর্টে কি ছিল? রিপোর্টে প্রথমে আমার কন্ডিশনটা বলা হয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে কেমন ছিলাম সেটাও রিপোর্টে ছিল। মেডিকেল টিম মনে করে যদি আমি ২৬ তারিখ রেস্ট নেই, তাহলে ২৭ তারিখ আমারা ভারতে যাব। ২৮ তারিখ আমাদের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে, তারপর ২-৩ তারিখের দিকে আরও একটি প্রস্তুতি ম্যাচ। আমি যদি এখন রেস্ট নেই এবং দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচটি খেলতে পারব। এরপর প্রথম ম্যাচে আমার যথেষ্ট সুযোগ থাকে দুই সপ্তাহের রিহ্যাব এবং ওভারঅল ১০ সপ্তাহের রিহ্যাব হয়ে যাবে। তাই সে অনুযায়ী আমি যথেষ্ট যোগ্য ছিলাম প্রথম ম্যাচটি খেলার জন্য। এটাই ছিল মূলত মেডিকেল রিপোর্ট।’

‘কোনো জায়গায় বলা হয়নি পাঁচ ম্যাচ দুই ম্যাচ বা চোটে খেলতে পারবো না, এসব বিষয়ে কোনকিছুই বলা হয়নি। তবে হ্যাঁ, আমার শরীরে ব্যথা ছিল, সেটা আমি অস্বীকার করছি না। যেমনটা আমি আগেও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছি। কেউ যদি ফিজিওর রিপোর্ট নিয়ে আমার সাথে চ্যালেঞ্জ করতে চান, আমি সেক্ষেত্রে তার সাথে ওপেনলি বসতে রাজি আছি।’

‘তারপর যে জিনিসটি ঘটে, মিডিয়াতে যে বিষয়গুলো ছড়িয়েছে, আমার কাছে মনে হয় না সেগুলো আমার ওয়ার্ল্ড কাপে না যাওয়ার পেছনে এটার কোনো অবদান ছিল। কারণ আমি এখনো কোনপ্রকার চোটে নেই, ব্যথা থাকতে পারে।’

‘তার এক-দুইদিন পর বোর্ডের টপ লেভেল থেকে আমাকে একজন ফোন দিলেন, সে বেশ ইনভলভড আমাদের ক্রিকেটের সঙ্গে। ফোন করে আমাকে বললেন, তুমি তো ওয়ার্ল্ড কাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাতে হবে, তুমি এক কাজ করো, তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।’

‘আমি বললাম ভাই, এটা তো এখনো ১২-১৩ দিনের কথা, আগামী ১২-১৩ দিনের মধ্যে আমি ভালো কন্ডিশনে থাকবো, আমি কি কারণে খেলব না? বললেন, তবে তুমি যদি খেলো, আমরা এরকম একটা প্ল্যান করছি বা আলোচনা করছি যে, তুমি খেলো, তোমাকে আমরা নিচে ব্যাটিং করাব।’

‘স্বাভাবিকভাবেই আপনাদেরকে মনে রাখতে হবে আমি কোন মাইন্ডসেট নিয়ে চোট থেকে ফিরে এসেছি। যেখানে কিনা হঠাৎ করে আবার এসব ধরনের কথা। যা আমার পক্ষে নেয়া সম্ভব না। আর ব্যাটিংয়ের বিষয়টিও আমার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি। কারণ আমি ১৭ বছর ধরে একই পজিশনে ব্যাটিং করেছি। এমনকি দুই-তিন-চারেও নামিনি। যদি এমন হতো যে, আমি তিন-চারে ব্যাটিং করি, তাহলে যদি উপর-নিচে করা হয়, সেটি অ্যাডজাস্টেবল হওয়ার মতো হলে।’

‘স্বাভাবিকভাবে এই কথাটি আমি কোনভাবেই ভালোভাবে নিতে পারিনি এবং এক পর্যায়ে আমি উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ প্রস্তাবটি আমার কাছে পছন্দই হয়নি। আমার কাছে তখন মনে হচ্ছিল, আমাকে জোর করে খেলতে বাধা দেয়া হচ্ছে। এমনটাই আমার কাছে মনে হচ্ছিল।’

‘তখন আমি তাদেরকে বললাম যে, দেখেন, আপনাদের যদি এধরনের কোনো চিন্তা-ভাবনা থাকে, তাহলে আমাকে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে পাঠানোর দরকার নেই। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। যে প্রতিদিন আমাকে এক একটা নতুন জিনিসের সামনে এনে দাঁড় করাবেন।’

‘ঐদিন তিনজন নির্বাচক এবং ফিজিও অনেকেই ছিল তাদের সামনে এসব বিষয়ে কথা হয়েছে, এধরনের কোনো কথায় হয়নি যে পাঁচ ম্যাচ খেলবে বা অন্যকোন ব্যাপারে। ওখানে কি বলেছি এখন আমি আবারও সেটি আপনাদের সাথে ক্লিয়ার করেছি অলরেডি।’

‘তবে সবকিছু মিলে আমার কাছে মনে হয়েছে যদি সত্যিই আমাকে দলে চাওয়া হয়, তাহলে আমাকে মানসিকভাবে ফ্রি এবং হ্যাপি থাকতে দিতে হবে। কারণ গত তিন-চার মাসে আমি খুব বাজে সিচুয়েশন থেকে উঠে এসেছি। আমার জন্য খুব কঠিন ছিল ওই সময়গুলো। তবে যে কথাগুলো আমাকে বলেছে, সেগুলো যদি আমাকে অন্যকোন ভাবে বলা হতো, তাহলে হয়তোবা আমি অন্যভাবে রিয়্যাক্ট করতাম, এমনকি মেনেও নিতাম হয়তোবা। তবে হঠাৎ করে যদি কোনো কারণ ছাড়া ফোন করে বলে যে, আপনি খেলেন না বা যদি খেলেন আমাদের আলোচনা হচ্ছে আপনাকে নিচে ব্যাটিং করতে হবে, এমন কিছু হঠাৎ করে বললে আমার সন্দেহ হয় যে তারা আসলে কতটা স্বচ্ছ।’

‘তবে আসলে এটাই ঘটেছে, এরচেয়ে বেশিকিছু আসলে আমার বলার নেই। আমার সাথে যা ঘটেছে সেটাই আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। তবে দিনশেষে আমি অবশ্যই চাইবো, যে ১৫ জন বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছে, তারা ভালোভাবে বিশ্বকাপ শেষ করো। আমি আশা করি যতটা সম্ভব তারা বাংলাদেশের জন্য সফলতা নিয়ে আসবে।’

‘তাছাড়া আপনারা আরও অনেককিছুই দেখেছেন। ছবির মধ্যে একটা দুইটা ঘটনা ইনসিডেন্স হতে পারে, কিন্তু একজনের সাথে গত তিন-চার মাসে সাত-আটটা ঘটনা যদি ঘটে, তাহলে ইনটেনশনালি হয়েছে বলে আমার মনে হয়। এটাই আমি অনুভব করি। এর থেকে বেশি আমার কিছু বলার নেই। আপনারা ভালো থাকবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। আরও একটা রিকোয়েস্ট করব, সবাইকে আমার কথা মনে রাখবেন, ভুলে যাবেন না কেউ।’