প্রচ্ছদ ›› খেলা

আশা দেখিয়ে হতাশায় ডুবালো বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক
২৯ অক্টোবর ২০২১ ২০:০৪:১১ | আপডেট: ৩ years আগে
আশা দেখিয়ে হতাশায় ডুবালো বাংলাদেশ

দুই দলের জন্যই বাঁচা-মরার লড়াই। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে দুই দলের সামনে জয় ভিন্ন কোনো বিকল্প নেই। এমন কঠিন সমীকরণকে সামনে রেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ক্ষণে ক্ষণে রং বদলেছে দুদলের বাঁচা-মরার লড়াই। কখনো ম্যাচের ভাগ্য দুলেছে বাংলাদেশের দিকে, কখনো হেলেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের দিকে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় শেষ ওভারের রোমাঞ্চে। শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ৩ রানের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে।

জয়ের জন্য শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১৩ রান। ক্রিজে ছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। কিন্তু আন্দ্রে রাসেলের করা সেই ওভার থেকে কোনো বাউন্ডারিই বের করতে পারেননি এই দুই ব্যাটসম্যান। দুজন মিলে সর্বসাকুল্যে বের করতে পেরেছিলেন ৯ রান। তাতে ৩ রানে পরাজয়ের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে।

এ পরাজয়ের ফলে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ থেকেই বিদায় নিতে হচ্ছে সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের। দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুপার টুয়েলভের বাকি দুই ম্যাচ রূপ নিয়েছে স্রেফ নিয়ম রক্ষার আনুষ্ঠানিকতায়।

বুধবার শারজাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪২ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেটে ১৩৯ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।

১৪৩ রান তাড়া করতে ওপেনিংয়ে চমক হিসেবে এসেছিলেন সাকিব আল হাসান। মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবারের ইনিংস উদ্বোধন করতে আসেন এই অলরাউন্ডার। কিন্তু এ চমক কাজে আসেনি। পঞ্চম ওভারেই সাজঘরে ফেরেন ১২ বলে ৯ রান করা সাকিব। পরের ওভারেই ফেরেন আরেক ওপেনার নাইমও। ১৯ বলে বাঁহাতি এই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ১২ রান।

পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ২৯ রান।

চার নম্বরে ব্যাট করতে আসা সৌম্য সরকারকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন লিটন দাস। তাদের ব্যাটে ১০ ওভার শেষে ২ উইকেটে স্কোরকার্ডে ৫৫ রান জমা করে বাংলাদেশ। কিন্তু এ জুটি লম্বা হতে দেননি আকিল হোসেইন। ১১তম ওভারের চতুর্থ বলে ১৭ রান করা সৌম্যকে ফিরিয়ে ৩১ রানের জুটি ভাঙেন আকিল।

এরপর লিটনের সঙ্গে ইনিংস মেরামতের কাজে যোগ দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু লিটনের সঙ্গে জুটি জমে ওঠার আগেই থামতে হয় অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানকে। ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে রামপলকে স্কুপ করতে চেয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু ব্যাটে বলে ঠিকভাবে সংযোগ না হওয়ায় ভেঙে যায় ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের স্ট্যাম্প। ৭ বলে ৮ রান করে থামেন তিনি। আউট হওয়ার আগে চতুর্থ উইকেটে লিটনের সঙ্গে গড়েন ৩০ রানের জুটি।

মুশফিক ফিরলেও বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল লিটন ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাট। কিন্তু প্রথম ২ ওভারে ২৪ রান দেওয়া ব্রাভো নিজেরা করা তৃতীয় ওভারে দিলেন মাত্র ৩ রান। তাতে জয়ের জন্য বাংলাদেশের সমীকরণ দাঁড়ায় ১৮ বলে ৩০ রান। কিন্তু রাভি রামপারের করা ইনিংসের ১৮তম ওভার থেকে মাত্র ৮ রান বের করতে সক্ষম হন লিটন-মাহমুদউল্লাহ।

শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ২২ রান। ডোয়াইন ব্রাভোর করা ১৯তম ওভারে ৬ মেরেই শুরু করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ওভারের শেষ বলে লং-অনে জেসন হোল্ডারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৪৩ বলে ৪৪ রান করা লিটন। শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহ ও আফিফকে ৯ রানের বেশি করতে দেননি আন্দ্রে রাসেল। ফলে ৫ উইকেটে ১৩৯ রানে থামে বাংলাদেশ। ২৪ বলে ৩১ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। আফিফ অপরাজিত থাকেন ২ রানে।

এর আগে টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন রিয়াদ। বোলিংয়ের শুরুটা খারাপ করেননি বাংলাদেশি বোলাররা। পাওয়ার প্লেতেই ক্যারিবিয়দের দুই উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজুর রহমান ও মাহেদি হাসান। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই আবারও ক্যারিবিয় শিবিরে আঘাত হানেন মাহেদি। মাত্র ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ক্যারিবিয়রা। 

টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ইনিংসের প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৯ রান তুলতে সক্ষম হন দুই ক্যারিবীয় ওপেনার ক্রিস গেইল ও এভিন লুইস। তৃতীয় ওভারে মুস্তাফিজকে বোলিংয়ে আনেন রিয়াদ। আর প্রথম ওভারেই দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন বাঁহাতি এই পেসার।

মুস্তাফিজের করা ওভারের শেষ বলটি তুলে মারতে গিয়ে বাতাসে ভাসিয়ে দেন এভিন লুইস। স্কয়ার লেগে দৌড়ে এসে সহজ ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম। ১২ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ক্যারিবিয়রা। ৯ বলে ৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন লুইস।

পঞ্চম ওভারে আবারও বোলিংয়ে আসেন মাহেদি। এসেই সাফল্য এনে দেন দলকে। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই গেলকে বোল্ড করেন ডানহাতি এই স্পিনার। ওভারের দ্বিতীয় বলে এই অফস্পিনারের ঘূর্ণিতে ইনসাইড এজড হয়ে ১০ বলে মাত্র ৫ রান করে ফেরেন গেইল। ১৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে আরও বিপাকে পড়ে উইন্ডিজ। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে মাহেদির বলে আউট হন গেইল।

বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লে শেষে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৮ রান তুলতে সক্ষম হয় ক্যারিবিরা।

এ ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ক্যারিবিয় শিবিরে আবারও আঘাত হানেন মাহেদি। নিজের তৃতীয় ওভারে রোসটন চেজের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ফিরতি ক্যাচ। কিন্তু সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলেন এই অফস্পিনার। পরের বলেই মাহেদিকে তুলে মারতে গিয়ে লং-অফে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন ৭ বলে ৯ রান করা শিমরন হেটমায়ার।

১২ ওভার শেষে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬১ রান। ইনিংসের ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। চতুর্থ বলেই চেজের খেলা স্ট্রেইট ড্রাইভটি তাসকিনের পায়ে লেগে আঘাত হানে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্পে। তখন ক্রিজের বাইরেই দাঁড়িয়ে আন্দ্রে রাসেল। তাতে কোনো বল না খেলেই রান আউট মারকুটে এই ব্যাটসম্যান। ক্রিকেটের ভাষায় যাকে বলে ডায়মন্ড ডাক।

পরের ওভারে লিটন দাসের ভুলে স্ট্যাম্পিংয়ের হাত থেকে বেঁচে যান নিকোলাস পুরান। ব্যক্তিগত ২ রানে জীবন পেয়ে ২২ বলে ১ চার এবং ৪ ছক্কায় ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তার ব্যাটেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে ১৪ ওভারে মাত্র ৭০ রান করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে ১৯তম ওভারের প্রথম দুই বলেই পুরান ও চেজকে সাজঘরে ফেরান তরুণ বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। আউট হওয়ার আগে ৪৬ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন চেজ।

একই ওভারের পঞ্চম বলে জেসন হোল্ডারকেও ফেরাতে পারতেন শরিফুল। কিন্তু কাভারে ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন আফিফ হোসেন ধ্রুব। এরপর সেই হোল্ডারই মুস্তাফিজের করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান। ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মেরে দলীয় সংগ্রহটা ১৪২ রানে নিয়ে যান স্বেচ্ছা অবসর থেকে ফেরা পোলার্ড।

বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মাহেদি, শরিফুল ও মুস্তাফিজ।