দুই দলের জন্যই বাঁচা-মরার লড়াই। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে দুই দলের সামনে জয় ভিন্ন কোনো বিকল্প নেই। কঠিন সমীকারণের এমন ম্যাচে ক্যারিবিয় ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো তোপের মুখেই রেখেছিলেন বাংলাদেশি বোলাররা। কিন্তু শেষ ৬ ওভারে স্কোরকার্ডে ৭২ রান জমা করে উইন্ডিজ। আর তাতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪২ রানের লড়াকু সংগ্রহই পেয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
অর্থাৎ জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৪৩ রান। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে এই লক্ষ্য তাড়া করতে জিততেই হবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলকে।
বুধবার শারজাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন রিয়াদ। বোলিংয়ের শুরুটা খারাপ করেননি বাংলাদেশি বোলাররা। পাওয়ার প্লেতেই ক্যারিবিয়দের দুই উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজুর রহমান ও মাহেদি হাসান। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই আবারও ক্যারিবিয় শিবিরে আঘাত হানেন মাহেদি। মাত্র ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ক্যারিবিয়রা।
টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ইনিংসের প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৯ রান তুলতে সক্ষম হন দুই ক্যারিবীয় ওপেনার ক্রিস গেইল ও এভিন লুইস। তৃতীয় ওভারে মুস্তাফিজকে বোলিংয়ে আনেন রিয়াদ। আর প্রথম ওভারেই দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন বাঁহাতি এই পেসার।
মুস্তাফিজের করা ওভারের শেষ বলটি তুলে মারতে গিয়ে বাতাসে ভাসিয়ে দেন এভিন লুইস। স্কয়ার লেগে দৌড়ে এসে সহজ ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম। ১২ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ক্যারিবিয়রা। ৯ বলে ৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন লুইস।
পঞ্চম ওভারে আবারও বোলিংয়ে আসেন মাহেদি। এসেই সাফল্য এনে দেন দলকে। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই গেলকে বোল্ড করেন ডানহাতি এই স্পিনার। ওভারের দ্বিতীয় বলে এই অফস্পিনারের ঘূর্ণিতে ইনসাইড এজড হয়ে ১০ বলে মাত্র ৫ রান করে ফেরেন গেইল। ১৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে আরও বিপাকে পড়ে উইন্ডিজ। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে মাহেদির বলে আউট হন গেইল।
বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লে শেষে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৮ রান তুলতে সক্ষম হয় ক্যারিবিরা।
এ ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ক্যারিবিয় শিবিরে আবারও আঘাত হানেন মাহেদি। নিজের তৃতীয় ওভারে রোসটন চেজের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ফিরতি ক্যাচ। কিন্তু সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলেন এই অফস্পিনার। পরের বলেই মাহেদিকে তুলে মারতে গিয়ে লং-অফে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন ৭ বলে ৯ রান করা শিমরন হেটমায়ার।
১২ ওভার শেষে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬১ রান। ইনিংসের ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। চতুর্থ বলেই চেজের খেলা স্ট্রেইট ড্রাইভটি তাসকিনের পায়ে লেগে আঘাত হানে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্পে। তখন ক্রিজের বাইরেই দাঁড়িয়ে আন্দ্রে রাসেল। তাতে কোনো বল না খেলেই রান আউট মারকুটে এই ব্যাটসম্যান। ক্রিকেটের ভাষায় যাকে বলে ডায়মন্ড ডাক।
পরের ওভারে লিটন দাসের ভুলে স্ট্যাম্পিংয়ের হাত থেকে বেঁচে যান নিকোলাস পুরান। ব্যক্তিগত ২ রানে জীবন পেয়ে ২২ বলে ১ চার এবং ৪ ছক্কায় ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তার ব্যাটেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে ১৪ ওভারে মাত্র ৭০ রান করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে ১৯তম ওভারের প্রথম দুই বলেই পুরান ও চেজকে সাজঘরে ফেরান তরুণ বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। আউট হওয়ার আগে ৪৬ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন চেজ।
একই ওভারের পঞ্চম বলে জেসন হোল্ডারকেও ফেরাতে পারতেন শরিফুল। কিন্তু কাভারে ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন আফিফ হোসেন ধ্রুব। এরপর সেই হোল্ডারই মুস্তাফিজের করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান। ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মেরে দলীয় সংগ্রহটা ১৪২ রানে নিয়ে যান স্বেচ্ছা অবসর থেকে ফেরা পোলার্ড।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মাহেদি, শরিফুল ও মুস্তাফিজ।