১৯৯৩ সালে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ২৮ বছর। এর মধ্যে কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি আলবিসেলেস্তেদের। রোববার ব্রাজিলের ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে অবসান হলো আর্জেন্টিনার দীর্ঘ প্রতীক্ষার।
এদিন অ্যাঞ্জেলো ডি মারিয়ার একমাত্র গোলে স্বাগতিক ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ট্রফি ঘরে তুলেছে লিওনেল মেসির দল। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এটা মেসির প্রথম শিরোপা।
১৯৮৬ বিশ্বকাপে ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে সর্বশেষ শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৯১ ও ১৯৯৩ সালের কোপা আমেরিকার শিরোপাও জিতেছে আলবিসেলেস্তেরা। এরপর আর কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতেনি ম্যারাডোনার উত্তরসূরীরা। সর্বশেষ শিরোপা জেতার পর চারবার কোপা আমেরিকায় ও একবার বিশ্বকাপে ফাইনাল খেললেও কোনোবারই শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাদের।
আর্জেন্টাইনদের এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটালেন ডি মারিয়া। তার জয়সূচক গোলেই ১-০ ব্যবধানে ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার এবারের আসরের চ্যাম্পিয়ন মুকুট পরেছে আর্জেন্টিনা। লাতিন অঞ্চলের সবচেয়ে জমজমাট এই আসরে এটা আর্জেন্টিনার রেকর্ড ১৫তম শিরোপা।
এদিকে কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টির বিপক্ষে হারের মধ্য দিয়ে ৭১ বছর পর মারাকানায় পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে ব্রাজিল। এর আগে মারাকানায় ব্রাজিল সবশেষ ম্যাচ হেরেছিল ১৯৫০ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে।
এ নিয়ে চারবার কোপা আমেরিকার ফাইনালের মঞ্চে মুখোমুখি হয়েছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। আগের তিনবারের দেখায় দুইবার শেষ হাসি হেসেছে ব্রাজিল। অন্যবার জিতেছে আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে শেষ দুইবারই আর্জেন্টিনাকে হতাশায় ডুবিয়েছিল সেলেসাওরা। ২০০৭ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। সেবার ৩-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল।
রোববার ম্যাচের শুরু থেকেই গতিময় ফুটবল খেলতে থাকে দুই দল। তবে পরিষ্কার আক্রমণ সাজাতে পারছিল না কোনো দলই। ম্যাচের ১৩তম মিনিটের মাথায় দারুণ এক আক্রমণ সাজায় ব্রাজিল। তবে আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডারদের বাধায় শট নিতে ব্যর্থ হন নেইমার-রিচার্লিসনরা।
২২তম মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে কাঙ্খিত গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। বাম পায়ের আলতো ছোঁয়ায় গোল করে দলকে এগিয়ে নেন ডি মারিয়া। ২০০৪ সালে সিজার ডিলগাডোর পর প্রথম কোনো আর্জেন্টাইন ফুটবলার হিসেবে কোপা আমেরিকার ফাইনালে গোল করলেন তিনি।
এরপর আরও গতিময় ফুটবল খেলতে শুরু করে আর্জেন্টিনা। একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে তারা। বিপরীতে বেশ কয়েকবার সুযোগ তৈরি করে গোলমুখে বল রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। ২৬তম মিনিটে কাসেমিরোর দুর্বল শট ফিরিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। ২৯তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণের যায় আর্জন্টিনা। কিন্তু ডি মারিয়ার শট ফিরিয়ে দিয়ে ব্রাজিলকে বিপদমুক্ত করেন মার্কিনিয়োস।
১-০ গোলে পিছিয়ে থেকেই প্রথমার্ধের খেলা শেষ করে ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমতায় ফিরতে পারতো স্বাগতিকরা। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি। ৫২তম মিনিটে অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় রিচার্লিসনের করা গোলটি। দুই মিনিট পরই রিচার্লসনের নেওয়া আরও একটি শট ফিরিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক।
গোলশোধে মরিয়া হয়ে একের পর এক আক্রমণ সাজাতে থাকে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তাতে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ মিলিয়ে আরও জমে ওঠে শেষ সময়ের খেলা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলের দেখা পায়নি কোনো দলই।