মেহেদী হাসান মিরাজের সেঞ্চুরির পর বোলারদের দাপটে ভারতকে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে এ নিয়ে টানা ২ ওয়ানডে সিরিজ জিতল টাইগাররা। সবশেষ ২০১৫ সালে মিরপুরেই ভারতকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
এদিন জয়টা অবশ্য বাংলাদেশের জন্য সহজ ছিল না। বিশেষ করে ৪৩তম ওভারে সাকিব আল হাসান শার্দুল ঠাকুরকে বিদায় করার পর যখন উইকেটে রোহিত শর্মা আসেন, বাংলাদেশ শিবিরে তখন থেকেই ভয় কাজ করে। ভারতীয় অধিনায়ক ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়ার পর হাসপাতাল ঘুরে দলের নয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন। পরে ইবাদত হোসেনের করা দলীয় ৪৬তম ওভারে দুটি ৬ ও একটি চারে ১৮ তোলেন। এই ওভারের আগে ভারতের জয়ের জন্য ৩০ বলে ৫৯ রান দরকার ছিল।
এরপরের ওভার মিরাজ প্রথম বল করে ইনজুরি নিয়ে মাঠের বাইরে চলে যান। তবে পরিবর্তে বল করতে আসা মাহমুদউল্লাহ পরের ৫ বলে মাত্র ১ রান দেন। মূলত ৪৮তম ওভারটিতে বড় বাজিমাত করে বাংলাদেশ। এ সময় স্ট্রাইকে থাকা মোহাম্মদ সিরাজ মোস্তাফিজুর রহমানের ৬ বল থেকে কোনো রান নিতে পারেননি।
কিন্তু ৪৯তম ওভারে ভারতের জয়ের জন্য ১২ বলে ৪০ রান দরকার হলে ঝড় তোলেন রোহিত। এ সময় দুটি ছক্কায় মোট ১৯ রান তোলেন। যদিও রোহিতের দুটি ক্যাচ ছেড়ে দেন ইবাদত ও আনামুল হক। শেষ বলে অবশ্য সিরাজকে বোল্ড করেন মাহমুদউল্লাহ।
শেষ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ১ উইকেট, আর ভারতের ২০ রান। তবে স্ট্রাইকে থাকা ভয়ঙ্কর রোহিত প্রথম ৫ বল থেকে দুটি ৪ ও একটি ছক্কায় ১৪ রান তোলেন। ফলে শেষ বলে জয়ের জন্য ৬ রান দরকার পরে। কিন্তু মোস্তাফিজের দারুণ এক ইয়র্কারে কোনো রকম ব্যাটে লাগাতে পারেন রোহিত। তিনি রানও নেননি। বাংলাদেশ জয়ের আনন্দে ভাসে।
বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলতে নামে বাংলাদেশ। তবে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতীয় বোলারদের তোপে ধস নামে বাংলাদেশ ইনিংসে। দলীয় ৬৯ রানেই টপঅর্ডারের ৬ উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। দলের চরম বিপর্যয়ে হাল ধরলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের অসাধারণ জুটি ও মিরাজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভার ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাবে স্বাগতিক বোলারদের অসাধারণ পারফরম্যান্সে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৬৬ রান করতে পারে রোহিত বাহিনী।
২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় ভারত। অধিনায়ক ও ওপেনার রোহিত শর্মার ইনজুরির কারণে ওপেন করতে নামে বিরাট কোহলি। তবে ইবাদত হোসেনের বাউন্সি বল খেলতে গেলে ব্যাটের কানায় লেগে এই তারকা ব্যাটারের (৫) স্টাম্প ভাঙে। পরের ওভারেই মোস্তাফিজুর রহমানের বাউন্সি বল শিখর ধাওয়ান (৮) খোঁচা দিলে শটে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ ক্যাচ ধরেন।
দশম ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দরকে (১১) লিটনের ক্যাচ বানান সাকিব আল হাসান। এরপর দলীয় ৬৫ রানে ও ব্যক্তিগত ১৪ রানে লোকেশ রাহুলকে এলবি করে ফেরান মিরাজ।
৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া ভারতের হয়ে হাল ধরেন শ্রেয়াস আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। অবশেষে এই জুটি ভাঙেন মিরাজ। দলীয় ১৭২ রানে ভয়ঙ্কর আইয়ারকে আফিফ হোসেনের ক্যাচে ফেরান তিনি। আইয়ার ১০২ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮২ রান করেন। আর পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১০১ বলে ১০৭ রান তোলেন আইয়ার-অক্ষর।
জুটির আরেক ব্যাটার অক্ষরকে ফেরান ইবাদত। ৫৬ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় সমান ৫৬ রান করা এই বাঁহাতিকে সাকিবের ক্যাচে মাঠ ছাড়া করান ডানহাতি পেসার। এরপর উইকেটে টিকে থাকার চেষ্টা করা ঠাকুরকে ৭ রানে সাকিব ও দীপক চাহারকে ১১ রানে ফেরান ইবাদত। রোহিত শেষে ২৮ বলে ৩টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৫১ রানে অপরাজিত থাকলেও দলকে জেতাতে পারেননি।
বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে ইবাদত সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট পান। ২টি করে উইকেট দখল করেন মিরাজ ও সাকিব।। মোস্তাফিজ ও মাহমুদউল্লাহ একটি করে উইকেট লাভ করেন।
টস জিতে এর আগে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন। তবে দুই ওপেনার আনামুল হক (১১) ও লিটন (৭) মোহাম্মদ সিরাজের বলে দ্রুতই আউট হন। নাজমুল হোসেন শান্তকে ২১ রানে ফেরান উমরান মালিক। এরপর দুই ওভারের ব্যবধানে সাকিব আল হাসান (৮) ও মুশফিকু রহিমকে (১২) মাঠ ছাড়া করান ওয়াশিংটন সুন্দর।
এরপরই হাল ধরেন মাহমুদউল্লা রিয়াদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। সপ্তম উইকেট জুটিতে তারা ১৬৫ বলে ১৪৮ রান তোলেন। সপ্তম উইকেটে এখন এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি। ভারতের বিপক্ষেও যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে সপ্তম উইকেটে এ বছরই আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে আফিফ হোসেনকে নিয়ে এই মিরাজই ১৭৪ রানের জুটি গড়ে অপরাজিত ছিলেন।
ইনিংসের ৪৭তম ওভারে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। উমরান মালিকের দ্বিতীয় শিকার হওয়া এই অভিজ্ঞ ব্যাটার ৯৬ বলে ৭টি চারে ৭৭ রান করেন। তবে অষ্টম উইকেটে নাসুম আহমেদকে নিয়ে ঝড় তোলেন মিরাজ। তারা ২৩ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ৬৮ রান!
ডানহাতি ব্যাটার মিরাজ ৮৩ বলে ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন। ইনিংসে ৮টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৪টি ছক্কা। আট বা এর নিচে নেমে এর আগে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পাননি কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান। এর আগের সর্বোচ্চ ইনিংসটিও ছিল মিরাজের, অপরাজিত ৮১ রানের। আজ সেটিকে নিজেই ছাপিয়ে গেলেন। তার সেঞ্চুরিটি আসে ইনিংসের শেষ বলে। নাসুম ১১ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট পান ওয়াশিংটন সুন্দর। দুটি করে উইকেট লাভ করেন সিরাজ ও মালিক।
ব্যাটে-বলে দারুণ করে টানা দুই ম্যাচে ম্যাচ সেরা হন মেহেদী হাসান মিরাজ।