জলবায়ু সংকট ক্রমাগত মানুষকে অসুস্থ করে তুলছে এবং জীবন ও স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে তুলছে। আর তাই এ বিপর্যয়ের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সংকটকে কপ-২৭ এর জলবায়ু আলোচনার কেন্দ্রে রাখার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
রোববার হু এ সংক্রান্ত একটি অনুস্মারক জারি করেছে।
অনুস্মারকে বলা হয়েছে, হু বিশ্বাস করে যে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় প্রশমন, অভিযোজন, অর্থায়ন এবং সহযোগিতার চারটি মূল লক্ষ্যে অগ্রগতির মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটাতে হবে।
এতে বলা হয়েছে, কপ-২৭ বিশ্বকে এক করার এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখার (প্যারিস চুক্তি) লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করতে পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
সাংবাদিকদের ও কপ-২৭ এ অংশগ্রহণকারীদের উচ্চ পর্যায়ের একটি আলোচনায় যোগ দিতে স্বাগত জানায় হু।
হু জেনেভা থেকে এক বার্তায় জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ইতোমধ্যেই মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জরুরি পদক্ষেপ না নিলে তা (প্রভাব ) চলতেই থাকবে।
হু’র মহাপরিচালক ড. তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সারা বিশ্বে কয়েক লাখ মানুষকে অসুস্থ বা আরও বেশি রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলছে। এবং আবহাওয়ার চরম বিপর্যয় দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে নেতারা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা কপ-২৭-এ একমত হবেন যে, স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের বিষয়টিকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা উচিত।’
হু এর প্রতিবেদন অনুসারে ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ও তাপপ্রবাহের কারণে প্রতি বছর আনুমানিক আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি ক্ষতির খরচ (অর্থাৎ, কৃষি ও পানি এবং স্যানিটেশনের মতো স্বাস্থ্য-নির্ধারক খাতে খরচ বাদ দিয়ে), ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ২ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার হবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে খরা, বিধ্বংসী বন্যা ও ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী হারিকেন এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় আঘাত হানছে।
এই বিষয়গুলো সামগ্রিকভাবে মানব স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।
তবে আশার কথা হলো, বিশ্বনেতারা যদি ২০২১ সালের নভেম্বরে গ্লাসগোতে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলিকে সম্মান করে এবং জলবায়ু সংকট সমাধানে আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেয়; তবে সমাধান আনা সম্ভব।
হু জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে একটি ন্যায্য, ন্যায়সঙ্গত ও দ্রুত পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিচ্ছন্ন জ্বলানি রূপান্তর করার জন্য সরকারগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছে।
ডিকার্বনাইজেশনের প্রতিশ্রুতিতেও উৎসাহব্যঞ্জক অগ্রগতি হয়েছে এবং হু একটি জীবাশ্ম জ্বালানি অপসারণ চুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। যার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলের জন্য ক্ষতিকারক কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত উপায়ে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা যাবে।
এটিকে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের একটি হিসেবে ধরা হয়।