প্রচ্ছদ ›› আন্তর্জাতিক

দক্ষিণ এশিয়া

গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত সোয়া কোটি মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ মে ২০২৩ ২১:২২:২০ | আপডেট: ১ year আগে
গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত সোয়া কোটি মানুষ
সিলেটে বন্যা | পুরনো ছবি

২০২২ সালে ঘূর্ণিঝড় ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে দক্ষিণ এশিয়ায় আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এক কোটি ২৫ লাখ মানুষ। এ সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই বন্যায় হয়েছে।

জেনেভাভিত্তিক ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যূতি দেখা দেয়। ২০২২ সালেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ এই ধরনের বাস্তুচ্যূতি রেকর্ড করা হয়েছে- যা গত এক দশকে বার্ষিক গড় বাস্তুচ্যূতি ৬৩ লাখের প্রায় দ্বিগুণ।

দক্ষিণ এশিয়ায় গত বছরে মোট যে পরিমাণ মানুষ আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তার মধ্যে বন্যায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন শতকরা ৯০ ভাগ। গত বছর কর্মকর্তারা মৌসুমী বৃষ্টিপাত সম্পর্কে ধারণা দেয়ার আগেই বন্যা দেখা দেয় বাংলাদেশ ও ভারতে। ফলে বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

আইডিএমসি বলেছে, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তানে যে বিপর্যয়ের কথা বলা হয়েছে তা শুধু মধ্যম থেকে বড় মাত্রার ইভেন্টগুলোর জন্য। এর অর্থ এর ভিতর অল্প মাত্রার বিপর্যয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ২০২১ সালে কম তীব্র ছিল বর্ষা মৌসুম। ধ্বংসাত্মক ঝড়ও ছিল কম। এ সময়ে ৯৯ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

মে মাসে বঙ্গোপসাগরে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। এতে ১৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। যদিও এই সংখ্যা এর আগের বছরের তুলনায় কম, তবু ধারণা করা হচ্ছে প্রতি দুই বা তিন বছরে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে তীব্র শক্তিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়। এ অবস্থায় বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। কারণ, প্রতি বছর এসব বিপর্যয় একই এলাকায় আঘাত হানে।

এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ খুলনা ও বরিশাল বিভাগেও আঘাত হানে। একই এলাকায় ২০২০ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফানে’র আঘাতে বাস্তুচ্যুত হন ২৫ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আম্ফানের আঘাতে শুধু খুলনায় বাস্তুচ্যুত হন কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ। এই সংখ্যা তিন কোটি ২৬ লাখ। এই বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যার ফলে দেশটির ১০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে চলে যায়। যার ফলে গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাস্তুচ্যূতির ঘটনা ঘটে।

২০২২ সালে বন্যার কারণে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যূতি ঘটে। এই বন্যা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে। এটি বাস্তুচ্যূত লোকদের মধ্যে অসুস্থতার হার বৃদ্ধির করেছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অবকাঠামো, কৃষি ও জীবিকার ক্ষতির কারণে লাখ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও দারিদ্র্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগটির কারণে বহু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বাস্তুচ্যূত ছিল।

২০২১ সালে বাংলাদেশে মৌসুমী বন্যায় অন্তত ৪ লাখ ৮২ হাজার লোক বাস্তুচ্যূত হয়েছে। বন্যার কারণে রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও পর্যাপ্ত নৌকার ঘাটতি ছিল আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণ শিবিরগুলোতে ত্রাণ সহায়তা সরবরাহে একটি বড় বাধা।