যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা টুইন টাওয়ার হামলার ২১ বছর আজ। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের দুটি আকাশচুম্বী ভবন ও পেন্টাগনসহ কয়েকটি স্থানে বিমান হামলা চালানো হয়। এটি ৯/১১ নামেও পরিচিত।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে জঙ্গি সংগঠন ‘আল-কায়েদা’র সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বাণিজ্যিক বিমান ছিনতাই করে এ হামলা চালায়। এর মধ্যে দুটি বিমান দিয়ে আঘাত করা হয় নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার খ্যাত টুইন টাওয়ারে। ওই হামলায় ভবন দুটি পুরোপুরি ধসে পড়ে।
একটি বিমান আঘাত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের পাশে। অন্যটি বিধ্বস্ত হয় পেনসিলভেনিয়ার শ্যাংকসভিলের এক মাঠে। এই বিমানটির হামলার লক্ষ্যস্থল হোয়াইট হাউজ নাকি মার্কিন ক্যাপিটল ছিল তা এখনো স্পষ্ট হওয়া যায়নি। এসব হামলায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
মাত্র ৯০ মিনিটের ব্যবধানে সংঘটিত এই সন্ত্রাসী হামলা বলা চলে- পুরো বিশ্বকেই বদলে দিয়েছে। এই সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধে জড়িয়েছে। হামলা শুধু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বকে একাতাবদ্ধ করেনি বরং নিরাপত্তা, অভিবাসন নীতিও বদলে দিয়েছে। বর্ণ বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য ও বিদ্বেষমূলক অপরাধ বাড়িয়েছে।
নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্রে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার, পেন্টাগন এবং শেঙ্কসভিলে একযোগে স্মরণকালের ভয়াবহ এ হামলা ছিল ইতিহাসে নজিরবিহীন। ওই হামলায় পেন্টাগন এবং শেঙ্কসভিল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মুহূর্তেই ধসে পড়েছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার।
এই ভয়াবহতা দেখে কেঁপে ওঠে পুরো বিশ্ব। হামলার সাথে সাথেই যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহ গিয়ে পড়ে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের ওপর।
একথা বলা যায়, নাইন ইলেভেনের সেই হামলা পুরো পৃথিবীকে বদলে দিয়েছিল। বিশ্ব আর আগের স্থানে থাকেনি। অথচ কারা এই হামলা চালিয়েছিল, কেন চালিয়েছিল, নেপথ্যে কারা ছিল, তা এই ১৫ বছরেও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে বিতর্ক রয়েই গেছে।
ঘটনায় সে সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ নতুন ‘ক্রুসেড’ শুরুর ঘোষণা দেন। আর এখান থেকেই শুরু হলো যুক্তরাষ্ট্রের বহুল বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। তাতেও নিহত হয়েছে অনেক মানুষ। অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে লাদেনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় একটি অধ্যায়ের।
নিউইয়র্কে স্থাপিত হয়েছে সেই নাইন-ইলেভেন স্মৃতি বিজড়িত জাদুঘর। টুইন টাওয়ার ভেঙে পড়ার স্থান ট্রিনিটি স্ট্রিটের ‘গ্রাউন্ড জিরো’তে নির্মিত এ জাদুঘরের উদ্বোধন করেন ওবামা। হামলায় নিহত প্রায় তিন হাজার মানুষের অধিকাংশেরই নামসহ ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস জাদুঘরটিতে রাখা হয়েছে।
ভয়াবহ এই হামলার জন্য আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বহুল বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু হয়। তাতেও অনেক মানুষ নিহত হন। অনেক নাটকীয়তার পর পাকিস্তানে লাদেনের হত্যার মধ্য দিয়ে শেষ হয় একটি অধ্যায়ের। তবে আক্রমণকারীরা আমেরিকাকে কী বার্তাই বা দিতে চেয়েছিলেন, নেপথ্যে কী ছিল, তা আজও পরিষ্কার হয়নি।
এদিকে, হামলার ২১তম বার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিন বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় নিহতদের স্মরণ করবে পুরো জাতি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) ভাষণ দেবেন এবং পেন্টাগনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।