প্রবল শৈত্যঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তর আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ঠাণ্ডা এবং প্রবল তুষারপাতের কারণে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই এককভাবে নিহত হয়েছে ৩৪ জন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শৈত্যঝড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো এবং নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নিহত ৩৪ জনের অধিকাংশই এ দুই অঞ্চলের।
এর মধ্যে কলেরাডোতে মৃতের সংখ্যা চার জন এবং নিউইয়র্কে ১২ জনে গিয়ে ঠেকেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে ঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিউইয়র্কের বাফেলো শহর। শুধুমাত্র এখানেই মারা গেছেন সাত জন।
পশ্চিম নিউইয়র্কের শহরটি তুষারঝড়ে বিধ্বস্ত। বিদ্যুৎ সংযোগসহ সেখানের জরুরি পরিষেবাগুলো বন্ধ রয়েছে। সবমিলিয়ে বড়দিনের ছুটিতে উৎসবের বদলে স্থবির হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবন।
বিবিসি জানিয়েছে, বড়দিনে (রোববার) ৫৫ মিলিয়নের বেশি আমেরিকান শীতল বায়ু সতর্কতার অধীনে দিন কাটিয়েছে। এবারের ঝড় বাফেলোর ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও ভয়াবহ বলে আখ্যা দিয়েছেন নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল।
পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে ক্যাথি হোচুল রোববার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, বাফেলোতে আট ফুট (২.৪ মিটার) তুষারপাত হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনজীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। খুব বিপজ্জনক জীবন-হুমকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে বাফেলোর বাসিন্দারা। এলাকার যে কাউকে বাড়ি থেকে বের না হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০২২ এর ঝড়ের ভয়াবহতা ১৯৭৭ সালের তুষারঝড়কেও অতিক্রম করেছে, যা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাফেলোতে তুষারঝড়ে গাড়ির ভেতরে আটকা পড়ে মারা গেছেন কয়েকজন। এবং তুষার আবৃত রাস্তা থেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে কয়েকজনকে। বাফেলো ছাড়াও ভেরমন্ট, ওহাইও, মিসৌরি, উইসকনসিন, কানসাস এবং কলোরাডোতে ঠাণ্ডা ও ঝড়ে মানুষ মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়েছে পশ্চিম দিকের রাজ্য মন্টানাতে। এ রাজ্যে তাপমাত্রা -৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে নেমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে গত পাঁচ দিনব্যাপী এ তুষারঝড় চলছে। এতে বেশ কয়েকটি রাজ্যের ২ লাখের বেশি মানুষ ক্রিসমাসের সকালে বিদ্যুৎ ছাড়াই জেগে উঠে। অনেকেই ছুটির ভ্রমণের পরিকল্পনা স্থগিত করে বাড়িতেই অবস্থান করছেন। হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে গত রোববার নাগাদ বিদ্যুৎ সংযোগহীন মানুষের সংখ্যা ১৭ লাখ থাকলেও তা ক্রমেই কমে আসছে। তুষারপাত আর শৈত্যঝড় বাড়তে থাকলেও ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন মানুষের সংখ্যা ১৭ লাখ থেকে কমে ২ লাখে এসেছে।
কানাডায়ও প্রবল তুষারপাতের কারণে সৃষ্ট দুর্ঘটনায় চার জনের প্রাণ গেছে। দেশটির ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যের মেরিট শহরের তুষার পড়ে পিচ্ছিল হয়ে থাকা রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে তাদের মৃত্যু হয়।
কানাডায়ও বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনো বিদ্যুৎ সংযোগহীন অবস্থায় আছেন। দেশটির কুইবেক রাজ্যে এককভাবে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগহীন রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এ আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের সাড়ে ৫ কোটি মানুষকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। জারি করা হয়েছে উইন্ড চিল সতর্কবার্তা।
সাধারণত কোনো এলাকায় পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট নেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে এ সতর্কবার্তা জারি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে তাপমাত্রা আরও নেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও কানাডার ম্যানিটোবায় এরই মধ্যে তাপমাত্রা মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।