ভারতের নতুন সামরিক নিয়োগ নীতি ‘অগ্নিপথ’ নিয়ে টানা তিন দিন ধরে চলছে বিক্ষোভ, যা রূপ নিচ্ছে সহিংসতায়। চাকরিপ্রার্থী যুবকদের আগুন-ভাংচুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে একাধিক রাজ্যে। খবর এনডিটিভি’র।
শুক্রবার সকালে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে ট্রেনে আগুন দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। এর আগে গতকালও বিহারের ভভুয়া রোড রেলস্টেশনে একটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।
সরকার প্রকল্পটিকে ‘রূপান্তরমূলক’ বলে উল্লেখ করেছে। যেটির মেয়াদ হবে চার বছর। বিক্ষোভকারীদের দাবি, চার বছর পর কেন সেনাদের ওই প্রকল্প থেকে বের করে দেয়া হবে? এটির সংস্কার চান তারা।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মঙ্গলবার ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নামে নতুন সশস্ত্র বাহিনীর পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এটির উদ্দেশ্য হলো- বেতন ও পেনশন খরচ কমিয়ে আনা। সেইসাথে জরুরি অস্ত্র কেনার অর্থ সংগ্রহ করা।
ট্রেনে আগুন দেয়া হয়েছে, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে। টানা তৃতীয় দিনের মতো চলা এ সহিংসতায় জনসাধারণ এবং পুলিশের গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে ।
উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভকারীরা সকালে বালিয়ায় একটি রেলস্টেশনে প্রবেশ করে ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
পূর্বাঞ্চলীয় ইউপি জেলার রেলস্টেশনের বাইরে রাস্তায় পুলিশের সাথে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভকারীদের আরেকটি দল সংঘর্ষে জড়ায়। বিক্ষোভের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যুবকরা লাঠি হাতে রেলস্টেশনে দোকান ও বেঞ্চ ভাঙছে।
বালিয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৌম্য আগরওয়াল সাংবাদিকদের বলেন, “বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছে পুলিশ। আমরা সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।”
বিহারের মহিউদ্দীননগর স্টেশনে জম্মু তাউই এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি বগিতে আগুন দেয়া হয়েছে। রেল কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
বিহার এবং উত্তর প্রদেশের বেশ কয়েকটি অংশ নতুন সামরিক নিয়োগ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে বিজেপি শাসিত হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশেও। বিক্ষোভকারীদের দ্বারা পাথর নিক্ষেপ এবং সহিংসতার জেরে হরিয়ানার পালওয়াল জেলায় ফোন ইন্টারনেট এবং এসএমএস ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বিহার সহিংসতায় ট্রেনে আগুন দেয়া হযেছে, বাস ভাঙচুর করা হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রকল্পে সাড়ে ১৭ বছর থেকে ২১ বছর বয়সী ৪৫ হাজার নাগরিককে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে। আাগামী ৯০ দিনের মধ্যে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং ২০২৩ সালের জুলাইয়ের মধ্যে প্রথম ব্যাচ প্রস্তুত করা হবে।
যারা এই প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত হবেন তারা ‘অগ্নিবীর’ নামে পরিচিত হবেন। কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে ভারত সরকার। সাধারণ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে যেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে, এই বাহিনীর জন্যও তাই লাগবে। নারীদেরও নিয়োগ দেয়া হবে।
এনডিটিভি’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চার বছর মেয়াদের মধ্যে ছয় মাস থাকছে প্রশিক্ষণের জন্য। আর এই চার বছর তাদেরকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার রুপি বেতন দেওয়া হবে। এ ছাড়া তাদেরকে মেডিকেল এবং ইন্সুরেন্স সুবিধা দেওয়া হবে। চার বছর পর এই ৪৫ হাজার সেনা থেকে ২৫ শতাংশ সেনাকে নিয়মিত বাহিনীতে নেওয়া হবে এবং নন-অফিসার র্যাংকে ১৫ বছর সেবা দেবেন তারা। বাকিরা ১১ থেকে ১২ লাখ রুপি নিয়ে অবসরে যাবেন। তবে তারা পেনশন সুবিধা পাবেন না। আর দায়িত্ব পালনে গিয়ে আহত বা নিহত হলে বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে।