গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে কথা বলেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খান। এ সময় সুস্থ হয়ে আবারও রাজপথ দখল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। খবর দ্য ডন ও বিবিসি।
শুক্রবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের শওকত খানম হাসপাতাল থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ইমরান খান এ হুঁশিয়ারি দেন। ভাষণে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোট সরকারের পদত্যাগ এবং আগাম নির্বাচনের দাবিতে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তা সফল করতে পিটিআইয়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে আহ্বান জানান তিনি।
ইমরান খান বলেন, ‘পাকিস্তানকে একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি দিতে যে আন্দোলন জনগণ শুরু করেছে, তা অব্যাহত থাকবে এবং শারীরিকভাবে খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠেই আমি ফের তাতে যোগ দেব।’
তিনি বলেন, ‘দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি একটি জাতি কখনো কারও সম্মান পায় না, কোনো উন্নতিও করতে পারে না। পুরো দেশটাই চুরি হয়ে গেছে, এবার সামনে দুটি পথ খোলা আছে- একটা শান্তির আর অন্যটা রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের। এখানে কোনো তৃতীয় রাস্তা নেই। আমি দেখেছি জাতি জেগে উঠেছে। এই জাগ্রতরাই তাদের জিনিস (ক্ষমতা) ফেরত আনবে।’
‘এবার আপনারা সিদ্ধান্ত নেন শান্তির পথে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে ব্যালট বক্সে পরিবর্তন আনবেন, নাকি সংঘাতে জড়াবেন?’ এই ভাষণে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার কাছে দেশ রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন ইমরান খান।
বিবিসি জানিয়েছে, গত ২৯ অক্টোবর লাহোর থেকে শুরু হয় লং মার্চের কর্মসূচি। ৪ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল এই লংমার্চ। তার এক দিন আগে ৩ নভেম্বর ওয়াজিরাবাদ শহরে সমাবেশ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন ইমরান। সমাবেশ চলাকালে স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে ইমরান খানকে লক্ষ্য করে একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল থেকে গুলি চালায় এক হামলাকারী। আরেক হামলাকারী ইমরানের দিকে পিস্তল তাগ করে গুলি চালিয়েছিল।
পিস্তল দিয়ে যে হামলাকারী হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল, তাকে হামলার সময়েই পাকড়াও করেন বছর ৩০-এর এক যুবক। একে ৪৭ অস্ত্রধারী হামলাকারীর বন্দুক থেকে বের হওয়া ৩ থেকে ৪টি গুলি ইমরান খানের পায়ে বিদ্ধ হয়েছে। হামলার পরই তাকে চিকিৎসার জন্য লাহোরের শওকত খানম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন ইমরান খান।
লাহোরের একটি হাসপাতালে হুইল চেয়ারে বসে ইমরান খান বলেছেন, তিনি গুলি থেকে বাঁচতে পারতেন না। যে দুই শুটারকে তিনি দেখেছেন, তারা যদি একযোগে আক্রমণ চালাতো। কারণ, আমি পড়ে গেলাম, আর শুটারদের একজন ধারণা করল আমি মারা গেছি এবং সে চলে গেল।
এদিকে ইমরান খানকে গুলির ঘটনার প্রতিবাদে তার দল পিটিআইয়ের ডাক দেওয়া বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। বড় বড় শহরে ইমরানের সমর্থকরা রাস্তা আটকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কোথাও কোথাও পিটিআইয়ের কর্মীরা পুলিশের দিকে ইট-পাথর ছুড়লে পাল্টা পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। অনেক এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়াধাওয়ির ঘটনাও ঘটেছে।