ইউরোপের বাইরে থাকা কতজন অভিবাসী কাজের ভিসায় ইতালিতে আসতে পারবেন, সেটি নিয়ে প্রতি বছর নির্দেশনা জারি করে দেশটির সরকার। চলতি বছরে সিজনাল (মৌসুমি) ও স্পন্সর ভিসায় অভিবাসীদের দেশটিতে কাজের অনুমতি (ওর্য়াক পারমিট) দিতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে ইতালি।
‘দেক্রেতো ফ্লুসি’ নামে পরিচিত এই বিজ্ঞপ্তিতে ৮২ হাজার ৭০৫ জন অভিবাসীকে ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি সরকার। প্রতি বছর বহু বাংলাদেশি এই ভিসায় ইতালিতে আসার চেষ্টা করে থাকেন।
নতুন নির্দেশনার আওতায় ইতালিতে আসতে আগ্রহীরা আগামী ২৭ মার্চ থেকে আবেদন করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়া চলবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তাই আবেদনকারীদের দেশটিতে মৌসুমি ভিসা (সিজনাল) এবং নিয়মিত ভিসায় (নন-সিজনাল) আবেদনের বিষয়ে কিছু জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস।
জরুরি নির্দেশনাগুলো হলো:
১। ইতালিতে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশটিতে বসবাসরত নিয়োগকারীরা সরকারের নির্ধারিত কর্মসংস্থান কেন্দ্র থেকে অনাপত্তি সনদ গ্রহণ করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন করতে হবে। এবারের ফ্লুসিতে ইতালিতে বসবাসরত কর্মহীন বা উপযুক্ত কর্মীরা নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে সুযোগ পাবেন। এ ধরনের দকর্মীর সংস্থান না হলে কেবল তখনই প্রতিষ্ঠানগুলো ইতালির বাইরে থেকে কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবে।
নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত পাবলিক ডিজিটাল আইডেন্টিটি সিস্টেমে (এসপিআইডি) ইমেইল করতে হবে। ইমেইলে নিয়োগকারী যাকে নিয়োগ করতে চান, তার নাম, পাসপোর্ট ও অন্য তথ্য উল্লেখ করে ইতালির স্থানীয় প্রশাসনিক অফিসে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করবে। এই আবেদনের জন্য নিয়োগকারীর ১৬ ইউরো বা সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা খরচ করতে হবে। তবে আবেদন দাখিলের জন্য ইতালির কোনো হেল্প ডেস্কের সহায়তা নিলে তার জন্য সার্ভিস চার্জ বাবদ একটি ফি পরিশোধ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ৩০০ ইউরো পর্যন্ত খরচ হতে পারে। আবেদনের জন্য এ ছাড়া আর কোনো খরচ নেই।
২। নিয়োগকারীর আয় ও অন্য বিষয়াদি বিবেচনা করে যোগ্য বিবেচিত হলে যে ব্যক্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে, তার নামে একটি ছাড়পত্র ইস্যু করবে স্থানীয় প্রশাসনিক অফিস। পরে এই ছাড়পত্রটি বাংলাদেশে ওই ব্যক্তির কাছে পাঠাতে হবে।
৩। যার নামে ছাড়পত্র ইস্যু হয়েছে, তিনি এই ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকার ইতালিয়ান দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করবেন।
৪। ভিসা নিয়ে ইতালিতে এসে নিয়োগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে স্থানীয় প্রশাসনিক অফিসে ছাড়পত্রের মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করবেন।
৫। কাজের চুক্তি না করলে এবং ছাড়পত্র দেখাতে না পারলে শুরু থেকেই ওই ব্যক্তি দেশটিতে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবেন।
৬। যারা আগে আবেদন দাখিল করতে পারবেন তাদের আবেদন আগে বিবেচনা করা হবে।
চলতি বছর সিজনাল ভিসায় ৪৪ হাজার কর্মী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যারা গত ৫ বছরের মধ্যে ইতালিতে সিজনাল ভিসায় নিয়োগ পেয়েছিলেন এবং প্রক্রিয়া অবলম্বন করে নিজ দেশে ফিরে গিয়েছেন তাদের জন্য ১ হাজার ৫০০ কোটা নির্ধারিত থাকবে। সিজনাল ভিসায় কৃষি কাজ করার জন্য কোটা বরাদ্দ আছে ২২ হাজার। এই কৃষি কাজের জন্য বাংলাদেশসহ ৩৩টি দেশ কোটা সুবিধার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
নন-সিজনাল/স্পনসর/উদ্যোক্তা ভিসায় ৩৮ হাজার ৭০৫ জন কর্মী নিয়োগের সুযোগ দিয়েছে ইতালি। নন-সিজনাল ভিসায় মালবাহী পরিবহণের জন্য চালক, নির্মাণশিল্প, পর্যটন ও আবাসন ব্যবস্থাপনা, কারিগরি, টেলিযোগাযোগ, জাহাজ নির্মাণ, খাদ্যসামগ্রী বিক্রয় ও ব্যবস্থাপনা সেক্টরে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ ৩৩টি দেশ অন্তর্ভূক্ত আছে। এই ৩৩টি দেশের জন্য ৩০ হাজার ১০৫টি কোটা সংরক্ষিত থাকবে। তবে প্রতিটি দেশের জন্য পৃথক করে কোনো কোটা নির্ধারণ করা হয়নি।
ইতালিতে অবস্থানরত সিজনাল ভিসায় এবং শিক্ষা/প্রশিক্ষণ ভিসায় আগত ৬ হাজার ৬০০ জনের ভিসা পরিবর্তন করে স্থায়ী কর্মী ভিসায় (নন সিজনাল ভিসায়) রুপান্তর করার সুযোগ থাকবে।
ফ্লুসি ডিক্রির আওতায় নিয়োগ প্রক্রিয়া ইতালিয় নিয়োগকারী এবং আগ্রহী কর্মীর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে দূতাবাসের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।