এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) মঙ্গলবার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকট কমাতে এবং দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০২০-২০২৫ সালের মধ্যে কমপক্ষে ১৪ বিলিয়ন ডলার দেয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে।
এই অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এডিবি আগে থেকেই বিভিন্ন সহযোগিতামূলক কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কেননা এ অঞ্চলের প্রায় ১.১ বিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্য ও খাদ্যের দামের কারণে স্বাস্থ্যকর খাবারের অভাব রয়েছে, চলতি বছর যা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এডিবি জানায়, খামার স্থাপন, খাদ্য উৎপাদন ও বন্টন, সামাজিক নিরাপত্তা, সেচ এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো প্রকৃতি-ভিত্তিক বিভিন্ন খাতে চলমান ও নতুন প্রকল্পগুলোতে এ অর্থায়ন করা হবে।
সংস্থাটি আর জানায়, তারা এ অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখে এমন অন্যান্য কার্যক্রমেও বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে। যেমন- জ্বালানি স্থানান্তর, পরিবহন, গ্রামভিত্তিক বাণিজ্যে প্রবেশাধিকার, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা।
এডিবি’র ৫৫তম বার্ষিক সভায় বক্তব্য দেয়ার সময় সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেন, ‘এই ধরনের সংকটের জন্য এটি একটি সময়োপযোগী ও জরুরি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।’
ইউক্রেনের পরিস্থিতির কারণে খাদ্যের প্রধান উপাদান এবং সারের সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও মহামারির প্রভাবে আগে থেকেই খাদ্য সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া টেকসই চাষের অনুশীলনের অভাবে ইতোমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়া খাদ্য ব্যবস্থা আরও চাপে পড়েছে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল খাদ্য সংকটের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এ অঞ্চলের কিছু দেশ খাদ্য আমদানি ও সারের ওপর নির্ভরশীল।
ইউক্রেন সংকটের আগেও এডিবির অনেক স্বল্প-আয়ের সদস্য দেশে জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশের জন্য পুষ্টিকর খাবার ছিল না।
নাজুক লোকেদের সহায়তার পাশাপাশি এডিবি’র খাদ্য নিরাপত্তা সহায়তা উন্মুক্ত বাণিজ্য, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের ফসল উৎপাদন ও জীবিকা উন্নত করবে এবং সারের ঘাটতি কমাবে। সেইসঙ্গে এর দক্ষ ব্যবহার বা জৈব বিকল্পগুলোকে উন্নত করবে, খাদ্য উৎপাদন ও বন্টনে বিনিয়োগে সহায়তা করবে, পুষ্টি বৃদ্ধি করবে এবং সমন্বিত ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি থেকে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করা একটি মূল লক্ষ্য হবে। যার ফলে মাটি, মিঠা পানি ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের অবনতি হয়েছে।
মি. আসাকাওয়া বলেছেন, ‘আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা এবং কৃষক ও কৃষিব্যবসাকে সহায়তা করা। যারা এই অঞ্চলের বেশিরভাগ খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণ করে। এবং তা নিশ্চিত করার জন্য মুক্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা, যাতে এটি সঠিকভাবে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছায়।’
এই প্রোগ্রামের অধীনে সহায়তা এই বছর শুরু হবে এবং ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলবে।
এটি এডিবি-এর সার্বভৌম ও বেসরকারি খাতের কার্যক্রম থেকে নেয়া হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বেসরকারি খাতের সহ-অর্থায়নে অতিরিক্ত পাঁচ বিলিয়ন ডলার লাভের চেষ্টা করবে।
এডিবি ২০০৭-২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের সময় এবং পরবর্তী বছর তার খাদ্য নিরাপত্তা অপারেশনাল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে, তার সদস্যদের সমর্থন থেকে শেখা অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করবে।
তারপর থেকে এডিবি খাদ্য নিরাপত্তায় বার্ষিক বিনিয়োগে দুই বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে এবং ২০১৮ সালে এডিবি খাদ্য নিরাপত্তাকে একটি মূল অপারেশনাল অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে।