পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নানা নাটকীয়তার পর অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারালেন জনপ্রিয় সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান। এটিই এখন গোটা বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত খবর।
পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলনেতা থেকে নিজেকে পুরো বদলে ফেলে পরিণত করেছেন একজন পেশাদার রাজনীতিবিদ-এ। ২০১৮ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল অনাস্থা ভোটে হেরে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে অপসারিত হন।
আলোচনার বাইরে থাকা ব্যক্তি ইমরানের ঘটনাবহুল জীবন নিয়ে আজকের ফিচার-
ক্রিকেটার ইমরান খান-এর প্রাথমিক জীবন
খান ১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ইকরামুল্লাহ খান নিয়াজী এবং মা শওকত খানম। তাদের পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে ইমরান দ্বিতীয় ও একমাত্র পুত্র। বড় বোন রুবিনা খানম এবং ছোট তিন বোন আলিমা খানম, উজমা খানব ও রানি খানম। বাবা-মা দুজনেই প্যাশতোন বংশোদ্ভূত। বাবার দিক থেকে ইমরান ১৬ শতকের সুলতান শের শাহ সুরির প্রধান সেনাপতি ও পাঞ্জাবের তৎকালীন গভর্নর হাইবত খান নিয়াজির বংশধর। অন্যদিকে মায়ের দিক থেকে তিনি সুফি, যোদ্ধা, কবি ও প্যাশতোন বর্ণমালার উদ্ভাবক পীর রোশানের বংশধর।
তাঁর চাচাতো ভাই জাভেদ বুরকি এবং মজিদ খান ক্রিকেটার ছিলেন। শান্ত ও লাজুক ছেলে ইমরান খান বেড়ে উঠেছেন সচ্ছল ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ইমরান খান-এর শিক্ষাজীবন
ইমরান খান লাহোরের আইচিসন কলেজ, ক্যাথেড্রাল স্কুল এবং পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের রয়্যাল গ্রামার স্কুল ওরচেস্টারে পড়াশোনা করেছেন। এই ওরচেস্টারেই তাঁর ক্রিকেটের হাতেখড়ি হয়। ১৯৭২ সালে তিনি অক্সফোর্ডের কেবল কলেজে ভর্তি হন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্যাখাত হওয়ার পর কেবল কলেজ একজন ক্রিকেট উৎসাহী পল হেইসের সহায়তায় তিনি এই কলেজে ভর্তি হতে পারেন। অতঃপর এখান থেকেই ১৯৭৫ সালে তিনি দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
ইমরান খান-এর তারকাখ্যাতি ও ভাবমূর্তি
ক্রিকেটে সুনামের রেশ ধরে ইমরান খান সেলিব্রিটি ব্র্যান্ড এন্ডোর্সার হিসাবে অনেক বিজ্ঞাপন এবং টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছিলেন। এর মধ্যে পেপসি পাকিস্তান, ব্রুক বন্ড, থামস আপ এবং ভারতীয় সাবান ব্র্যান্ড সিন্থোল অন্যতম। পাকিস্তানসহ পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে তিনি একক ও অতুলনীয় তারকাতে পরিণত হয়েছিলেন। প্রয়াত জনপ্রিয় বলিউড অভিনেতা দেব আনন্দ তাকে তাঁর ১৯৯০ সালের স্পোর্টস অ্যাকশন-থ্রিলার মুভি আউয়াল নাম্বার-এ অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিনয়ে দক্ষতা না থাকার কথা বলে ইমরান সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ২০১০ সালে একটি পাকিস্তানি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমরান খানের জীবনের উপর ভিত্তি করে একটি বায়োগ্রাফি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে, যার শিরোনাম ছিল কাপ্তান: দ্য মেকিং অফ এ লিজেন্ড। ছবিটি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব থেকে শুরু করে ইমরানের গোটা কর্মজীবনকে তুলে ধরেছিলো। এ ছবিতে ১৯৯২-এর পাকিস্তানের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়কে চিত্রায়িত করা হয়েছিল।
দাম্পত্য জীবনে একজন ব্যক্তি ইমরান খান
প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ- ১৯৯৫ সালের ২১ জুন ইংল্যান্ডের রিচমন্ড রেজিস্ট্রি অফিসে একটি জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে বিয়ে হয় ইমরান খান ও জেমিমা গোল্ডস্মিথের। তারপর সারে প্রদেশে গোল্ডস্মিথের বাড়িতে একটি সংবর্ধনা দেয়া হয়, যেখানে লন্ডনের অভিজাতরা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈবাহিক অনুষ্ঠানটি ‘দ্যা ওয়েডিং অফ দ্যা সেঞ্চুরি’ নামে পরিচিত।
জেমিমা লেডি অ্যানাবেল ভেন-টেম্পেস্ট-স্টুয়ার্ট এবং যুক্তরাজ্যের অন্যতম ধনী ব্যক্তি স্যার জেমস গোল্ডস্মিথের জ্যেষ্ঠ সন্তান। ২০০৩ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অন্তর্গত ইসলামের আধুনিক ট্রেন্ড ভিত্তিক মিডেল ইস্টার্ন স্টাডিজে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
ইমরান ও জেমিমার দুই পুত্র সন্তান; সুলাইমান ইসা এবং কাসিম। ২০০৪ এর ২২ জুন এই দম্পতি তাদের দীর্ঘ নয় বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটান।
দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খান- কয়েক মাস ভক্তদের জল্পনা-কল্পনার খোরাক যোগিয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ইমরান খান বিয়ে করেন ব্রিটিশ পাকিস্তানি সাংবাদিক এবং টেলিভিশন উপস্থাপক রেহাম খানকে। তার বাবা নায়ার রামজান একজন চিকিৎসক ছিলেন এবং তার মা সাঈদা নায়ার। বানি গালায় ইমরানের বাসভবনে একটি সাধারণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল বিয়েটি। নয় মাস পরে ২০১৫ সালের অক্টোবরে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
তৃতীয় স্ত্রী বুশরা বিবি- ইমরান খানের তৃতীয় স্ত্রী চল্লিশোর্ধ বুশরা বিবি এবং তাদের বিয়ে হয় ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি লাহোরে ইমরানের নিজস্ব বাসভবনে। ইমরানের সঙ্গে বিয়ের পূর্বে বুশরা সুফিবাদের সাথে সংযুক্ত ছিলেন। এমনকি ইমরানের আধ্যাত্মিক পরামর্শদাতা বা মুর্শিদ ছিলেন বুশরা। বুশরার প্রথম স্বামীর নাম খাওয়ার মানেকা এবং সেই ঘরে তার দুই ছেলে এবং তিন মেয়ে আছে। খাওয়ার মানেকা ছিলেন একজন ঊর্ধ্বতন কাস্টমস কর্মকর্তা এবং বেনজির ভুট্টোর মন্ত্রিসভার সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গোলাম মুহাম্মদ মানেকার ছেলে। সূত্র- ইউএনবি