প্রচ্ছদ ›› আন্তর্জাতিক

ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনা

‘ঘুম থেকে উঠে দেখি অনেকের মুখ বিকৃত হয়ে গেছে’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৩ জুন ২০২৩ ১৬:০৭:৩৪ | আপডেট: ১০ মাস আগে
‘ঘুম থেকে উঠে দেখি অনেকের মুখ বিকৃত হয়ে গেছে’
সংগৃহীত ছবি

ভারতের ওডিশা রাজ্যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ২৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহতের সংখ্যাও ৮৫০ জন ছাড়িয়েছে। তবে ট্রেনের ভেতরে এখনও অনেকে আটকা পড়ে আছেন।

দেশটির কর্মকর্তাদের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা যারা দুর্ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছিল ও একজন আহত ট্রেন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে যিনি করোমন্ডেল এক্সপ্রেসে ভ্রমণ করছিলেন। এর মধ্যে একজন গিরিজা শংকর রথ।

তিনি বলেন, ‘মালবাহী ট্রেনটি অন্য লাইনে স্থির ছিল। ‘করমন্ডল এক্সপ্রেস’ লাইনচ্যুত হয়ে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ওপাশ থেকে আসা ট্রেনটি ছিল ‘শালিমার এক্সপ্রেস’। এটি পেছন থেকে করমন্ডল এক্সপ্রেসকে ধাক্কা দেয়। ফলে দুটি কোচে বিকট শব্দে লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এর কিচুক্ষণ পরেই চারদিকে ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়।

এতে চারদিক বিশৃঙ্খল ছিল এবং লোকেরা চারদিকে দৌড়াচ্ছিল। আমরা আটকে পড়া কয়েকজন যাত্রীকে বের করতে শুরু করি। জীবিত কয়েকজনকে বের করতে পেরেছি এবং কিছু মরদেহও বের করেছিলাম। পরে উদ্ধারকর্মীরা এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। প্রায় সারারাত চলে এই কাজ।’

টুটু বিশ্বাস নামের আরেকজন বিবিসিকে বলেন, আমরা একটি বিকট শব্দ শুনতে পেলাম। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি বাইরে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। একটি মালবাহীট্রেনের উপর অন্য একটি ট্রেন উঠে গেছে। পরে আরেকটি ট্রেন এসে লাইচ্যুত হয়। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ট্রেন দুর্ঘটনার কবল থেকে বেঁচে যাওয়া এক যাত্রীর মুখে এর বর্ণনা দিয়েছে। সঞ্জয় মুখিয়া নামে ওই দিনমজুর করমণ্ডল-শালিমার এক্সপ্রেসে করে চেন্নাই যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, সেইসময় তিনি ট্রেনের টয়লেটে ছিলেন, এরপর আচমকা ব্যাপক কম্পন অনুভব করেন।

সঞ্জয় বলেন, সবকিছু কাঁপছিল এবং আমরা টের পাচ্ছিলাম বগিগুলো পড়ে যাচ্ছে। বিহারের এ বাসিন্দা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও আহত হয়েছেন। তিনি জানান, রেললাইনে অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখেছেন।

আরেক যাত্রী জানান, ট্রেনটি যখন লাইনচ্যুত হয় তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। এরপর ১০-১৫ জন আমার উপরে পড়ে যায়। আমি যখন কামরার বাইরে আসি তখন বিভিন্ন অঙ্গ দেখতে পাই পড়ে আছে। অনেকের মুখ বিকৃত হয়ে গেছে।

মোহাম্মদ আকুইব ২৬ জনের দল তিনটি বগিতে করে যাচ্ছিলেন। এদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী ছিলেন যারা কেরালায় নামতেন। তিনি বলেন, আমরা এস-৪, এস-৩ এবং এস-২ বগিতে ছিলাম। হুট করে একটি শব্দ শুনতে পাই এবং বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়। তবে আমাদের সবাই নিরাপদে ছিলাম।

দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। অনুভব দাস নামে করমণ্ডল এক্সপ্রেস বেশ কয়েকটি টুইটে দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, এই দুর্ঘটনায় তিনটি ট্রেন জড়িত ছিল। তিনি ২০০-২৫০ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন।

ইতোমধ্যে এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেইসঙ্গে তিনি প্রয়োজনীয় সকল ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ ওডিশায় যাচ্ছেন মোদি।

সেখানে মোদি হাসপাতালে ভর্তি আহতদের দেখতে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, মোদি প্রথমে দুর্ঘটনা কবলিত স্থান পরিদর্শনে যাবেন। এরপর যাবেন হাসপাতালে।