প্রচ্ছদ ›› আন্তর্জাতিক

চীন-রাশিয়াকে ছাড়াই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারে বেসামরিক হত্যার নিন্দা জানাল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৪ আগস্ট ২০২৩ ১১:১৮:৫৮ | আপডেট: ৮ মাস আগে
চীন-রাশিয়াকে ছাড়াই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারে বেসামরিক হত্যার নিন্দা জানাল

চীন এবং রাশিয়াকে বাদ দিয়েই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা মিয়ানমারে ‘নির্মম সহিংসতা’ এবং বেসামরিক হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে সামরিক শাসকদের আক্রমণ বন্ধ করা, ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে মুক্তি দিয়ে মানবাধিকারকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছে।

বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ কাউন্সিল সদস্যদের মধ্যে ১৩ জনের দেয়া একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বরে মিয়ানমারের বিষয়ে প্রথমবারের মতো গৃহীত নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়নে ‘অপ্রতুল অগ্রগতি’ হয়েছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চির নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত চীন এবং রাশিয়া, ভারতের সঙ্গে কাউন্সিলের ভোট দেয়া থেকে ১২-০ বিরত থাকে,যার দুই বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থার প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস সম্প্রতি মিয়ানমার সফর করেছেন। সফর শেষে মিয়ানমারের সংকট সমাধানে সহকারী মহাসচিব খালেদ খিয়ারির প্রচেষ্টার বিষয়ে কাউন্সিলকে ব্রিফ করেন। এর পর জাতিসংঘে ব্রিটেনের উপ-রাষ্ট্রদূত জেমস কারিউকি অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের সামনে বিবৃতিটি পাঠ করেন।

বিবৃতিটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কাউন্সিলের প্রস্তাবের দাবিগুলোকে পুনর্ব্যক্ত করে, যা এখনও বাস্তবায়নের প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে- ক্ষমতাচ্যুত নেতা সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট সহ ‘নির্বিচারে আটক’ সকল বন্দীর অবিলম্বে মুক্তি, গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা, মানবাধিকার এবং ‘জনগণের গণতান্ত্রিক ইচ্ছাকে সম্মান করা’এবং আইনের শাসন বজায় রাখা।

এটি ১০ সদস্যের অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্যও আহ্বান জানিয়েছে। যেটিতে ২০২১ সালের এপ্রিলে সম্মত হয়েছিল মিয়ানমারের শাসকরা। কিন্তু তা বাস্তবায়নে সামান্য অগ্রগতি করেছে। এতে সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করা, আসিয়ান দূতের মধ্যস্থতায় সকল পক্ষের মধ্যে একটি সংলাপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আসিয়ান দূত মিয়ানমার সফর করবেন এবং সব পক্ষের সঙ্গে দেখা করবেন। সেই আলোকে রাষ্ট্রদূতরা মিয়ানমার সফর করেছেন কিন্তু সুচির সঙ্গে তাদেরকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৩ জন কাউন্সিল সদস্য বলেছেন, সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের কারণে মিয়ানমারে ১৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন হয়েছে। তাদের মধ্যে দেড় কোটিরও বেশি মানুষের পর্যাপ্ত খাবারের নিয়মিত সরবরাহ করা হয়নি এবং ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সদস্যরা ২৭ আগস্ট উত্তর রাখাইন রাজ্যে সামরিক দমন অভিযানের পর বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের দুর্দশার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মিয়ানমারকে ‘সঙ্কটের মৌলিক কারণগুলোর সমাধান করতে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে। তারা আরও বলেছে, দেশটির প্রায় সব রোহিঙ্গাই নাগরিকত্ব বঞ্চিত এবং তাদের চলাফেরা সীমিত।

কাউন্সিলের সভায় কূটনীতিকরা চলতি মাসে জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তকারীদের একটি প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা বলেছিলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং সহযোগী মিলিশিয়ারা ক্রমবর্ধমান ঘন ঘন এবং নির্লজ্জ যুদ্ধাপরাধ করছে।

মিয়ানমারের জন্য স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়ার জন্য ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জেনেভা-ভিত্তিক জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল বলেছে, এটি জুনে শেষ হওয়া বছরে অসামঞ্জস্যপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে শক্তিশালী বোমা হামলা চালিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে। সামরিক বাহিনীর অভিযানের সময় আটক ব্যক্তিদের গণহারে হত্যা করেছে এবং বেসামরিক বাড়িঘর ব্যাপকভাবে পুড়িয়ে ফেলেছে।

তদন্ত দলের প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান বলেছেন, ‘আমাদের প্রমাণগুলো দেশে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের নাটকীয় বৃদ্ধির দিকে নির্দেশ করে। বেসামরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত আক্রমণ এবং আমরা মামলার ফাইল তৈরি করছি যাতে আদালত অপরাধীদের পৃথকভাবে অভিযুক্ত করার সময় ব্যবহার করতে পারে।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড একটি বিবৃতিতে তদন্ত দলের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘শাসকদের ভয়ঙ্কর নৃশংসতা বন্ধ করতে হবে।’ সেনাবাহিনীর ‘অনিচ্ছাকৃত এবং অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরের রেজুলেশনের বাইরেও নিরাপত্তা পরিষদকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

জাতিসংঘে মিয়ানমারের সু চি সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী রাষ্ট্রদূত কিয়াও মো টুন সামরিক বাহিনীতে অস্ত্র, জেট জ্বালানি এবং আর্থিক প্রবাহের উপর নিষেধাজ্ঞার জন্য একটি প্রস্তাব গৃহীত করার জন্য কাউন্সিলকে অনুরোধ করেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতি থেকে সামরিক বাহিনীকে অপসারণ এবং একটি বেসামরিক, ফেডারেল, গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার দাবি জানায় মিয়ানমারের জনগণ।’