১১ লাখ ব্যারেল তেল নিয়ে ইয়েমেনের উপকূলে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ একটি ট্যাংকার নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে জাতিসংঘ৷ পরিবেশবিদরাও বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন, যদি বিপুল ওই তেল সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে, কারণ- ট্যাংকারটি এতোই পুরনো যে, ইয়েমেনে যুদ্ধের কারণে সেটি ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
এটি দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা করা না গেলে ১৯৮৯ সালের আলাস্কা বিপর্যয়ের চেয়ে চারগুণ বেশি জ্বালানি তেল সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
সেফার নামের তেলের ট্যাঙ্কার হিসাবে ১৯৭৬ সালে নির্মিত হলেও এটিকে কে এক দশক পরে একটি ভাসমান তেল স্টোরেজ এবং অফলোডিং (এফএসও) ইউনিটে রূপান্তরিত করা হয়। ৩৭৬ মিটার-লম্বা (১২৩৩ ফুট) জাহাজটিতে এক মিলিয়ন ব্যারেলেরও বেশি হালকা অপরিশোধিত তেল রয়েছে। কিন্তু ইয়েমেনে যুদ্ধের কারণে বছরের পর বছর ধরে তা সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না।
ট্যাংকার থেকে তেল অপসারণে এখন পর্যন্ত দাতা দেশগুলোর কাছ থেকে তিন কেটি ৩০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, যা প্রয়োজনীয় তহবিলের অর্ধেকেরও কম৷ জাতিসংঘ বলছে, ট্যাংকারটি কোন সময় ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যার কারণে সমুদ্রে বিপুল তেল ছড়িয়ে পরিবেশের ভয়ানক বিপর্যয় ঘটবে৷
১৯৮৯ সালের আলাস্কায় এক্সন ভালদেজ ট্যাংকার থেকে কয়েক কোটি লিটার তেল আর্কটিক সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে৷ পরিবেশে যার নেতিবাচক প্রভাব এখনও রয়ে গেছে৷ জাতিসংঘ বলছে, এফএসও সেফারের বিপর্যয় ঘটলে এর চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি হবে৷
৪৫ বছরের পুরাতন ট্যাংকারটি দীর্ঘদিন ভাসমান তেল সংরক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে৷ বর্তমানে সেটি ইয়েমেনের হুদাইদা বন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে৷
আরও অর্থ প্রয়োজন
১১ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল বহনকারী ট্যাংকারটি জরুরিভিত্তিতে অপসারণ করতে আট কোটি ডলার প্রয়োজন৷ তারমধ্যে নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে প্রায় ৮০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি মিলেছে৷ তিন কোটি ৩০ লাখ ডলারের বাকিটা ব্রিটেন, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, লুক্সেমবুর্গ, নরওয়ে, কাতার, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইয়নিয়ন দিবে বলে জানিয়েছে৷ তারপরও সেটি প্রয়োজনের অর্ধেকেরও কম৷
জাতিসংঘের হিসাবে, ট্যাংকারটিতে যে পরিমাণ তেল রয়েছে ছড়িয়ে পড়লে তা পরিস্কার করতে দুই হাজার কোটি ডলার লাগবে৷
ইয়েমেনে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী ডেভিড গ্রেসলি এক বিবৃতিতে জানান, ট্যাংকারটি অপসারণে চার মাস সময় লাগবে৷ এই অভিযান শুরুর জন্য দ্রুত বাকি অর্থ প্রয়োজন৷ কেননা আবহাওয়ার কারণে পরবর্তীতে এই অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়বে৷
তিনি বলেন, ‘বছর শেষের ঝড়ো বাতাস আর তীব্র স্রোত এড়ানোর জন্য আমাদেরকে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এই অভিযান শেষ করতে হবে৷ ...নয়ত এটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকবে এবং যেকোন অভিযান পরিচালনাও ঝুঁকিপূর্ণ হবে৷’
আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিনপিসও দ্রুত তহবিলের ব্যবস্থা করতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷ এদিকে দাতা দেশগুলোর এক সম্মেলনের আগে গ্রেসলি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ট্যাংকারটি থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই তেল ছড়াতে শুরু করতে পারে৷ এর ফলে সাত বছরব্যাপী যুদ্ধে থাকা ইয়েমেন আরেক দফা ভয়াবহ পরিবেশগত ও মানবিক বিপর্যয়ে পড়বে৷
জাতিসংঘের সতর্কতা অনুযায়ী, শুধু ইয়েমেন নয় এমন কিছু ঘটলে গোটা অঞ্চলের মৎস্যজীবী কয়েক কোটি মানুষ সংকটে পড়বেন৷ ঝুঁকিতে পড়বে সৌদি আরব, ইরিত্রিয়া, জিবুতি এবং সোমালিয়ার মতো আশেপাশের দেশগুলোও৷
সূত্র: ডয়েচেভেলে ও আলজাজিরা, ইউএন নিউজ।