থাইল্যান্ডের একটি দিবাযত্ন কেন্দ্রে সাবেক এক পুলিশ অফিসারের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
দেশটির ইতিহাসে মারাত্মক তাণ্ডব চালানো এই ঘটনায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের গুলি করে হত্যা করা হয়। পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে আরও অনেকেই নিহত হয়।
এ বছরের শুরুর দিকে হামলাকারীকে বরখাস্ত করা হয় এবং তিনি নিজ ঘরে সন্তান ও স্ত্রীকে হত্যা করার পর আত্মহত্যা করেন।
থাই পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিসকে (থাই পিবিএস) এক শিক্ষক বলেন, হামলাকারী গাড়ি থেকে নেমে এসে বাইরে দুপুরের খাবার খাওয়া একজনকে গুলি করে। এরপর আরও গুলি চালায়। পুনরায় গুলি চালানোর জন্য যে বিরতি নিয়েছিল হামলাকারী, সে সময়ের মধ্যে শিক্ষক পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
নাম না জানিয়ে রুদ্ধশ্বাস অবস্থায় এই নারী বলেন, ‘আমি দৌড়ে ফিরে যেয়ে দেখি শিশুরা ঘুমিয়ে আছে। শিশুদের বয়স দুই-তিন বছর হবে।’
অন্য একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দিবাযত্ন কেন্দ্রের কর্মীরা দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু বন্দুকধারী দরজায় গুলি চালাতে থাকে।
নাম না জানানো এই প্রত্যক্ষদর্শী থাইল্যান্ডের কম চাদ লুয়েক টেলিভিশনকে বলেন, ‘যে শিক্ষিকা মারা গেছেন, তার কোলে একটি শিশু ছিল। আমি ভাবিনি যে সে শিশুদের হত্যা করবে! তবে সে দরজায় গুলি করে এবং ঠিক সেদিক থেকেই গুলি চালায়।’
পুলিশের মুখপাত্র আর্চায়ন ক্রাইথং বলেন, অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। যাদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা গুরুতর।
দেশটির অন্যতম দরিদ্র অঞ্চল থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ নংবুয়া লাম্পুর গ্রামীণ শহর উথাই সাওয়ানে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ হামলাকারীকে সাবেক পুলিশ অফিসার পানিয়া কামরাপ (৩৪) হিসেবে শনাক্ত করে। পুলিশের মেজর জেনারেল পাইসাল লুয়েসমবুন পিপিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মাদকের অভিযোগের কারণে তাকে এ বছরের শুরুতে বাহিনী (পুলিশ) থেকে বরখাস্ত করা হয়।
এক ফেসবুক পোস্টে থাই পুলিশ প্রধান জেনারেল ডুমরংসাক কিত্তিপ্রপাস বলেন, পুলিশের সার্জেন্ট হিসেবে কর্তব্য পালন করা এই ব্যক্তির শুক্রবার আদালতে মেথামফেটামিন জড়িত মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। এবং অনুমান করা হচ্ছে, যেহেতু দিবাযত্ন কেন্দ্রটি তার বাড়ির কাছে তাই তিনি এটি বেছে নিয়েছেন।
এর আগে ডুমরংসাক সাংবাদিকদের বলেছেন যে ব্যবহৃত প্রধান অস্ত্রটি ছিল একটি ৯ এমএম পিস্তল এবং এটি সে নিজেই কিনেছিল। পয়সাল জানান, তার কাছে একটি শটগান ও একটি ছুরিও ছিল।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রয়ুথ চ্যান-ওচা সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল বলে প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গেছে। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা আছে।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা ঘটা ঠিক হয়নি। আমি নিহত ও তাদের স্বজনদের প্রতি গভীর শোক বোধ করছি।’
পুলিশ নিহতের সংখ্যার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দেয়নি। তবে তারা বলেছে যে দিবাযত্ন কেন্দ্রে অন্তত ২২ শিশু ও দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক নিহত হয়েছে। অন্যত্র আরও অন্তত দুই শিশু নিহত হয়েছে।
থাই টিবিএস টেলিভিশন অনুসারে, হামলায় নিহতদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য রাত পর্যন্ত হামলার ঘটনাস্থলেই ছিলেন। মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের সাথেই বসে ছিলেন, তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন।
থাইল্যান্ডে আগ্নেয়াস্ত্র সংক্রান্ত মৃত্যুর হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের তুলনায় বেশ কম। তবে জাপান ও সিঙ্গাপুরের তুলনায় বেশি, যেখানে কঠোর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন রয়েছে। ২০১৯ সালে আগ্নেয়াস্ত্র সংক্রান্ত মৃত্যুর হার প্রতি এক লাখে প্রায় ৪টি ছিল, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি এক লাখে জনে প্রায় ১১টি এবং ব্রাজিলে প্রতি এক লাখে জনে প্রায় ২৩টি৷