করোনার প্রথম ঢেউ ও কড়া লকডাউনের ধাক্কায় ভারতের অর্থনীতির ২৪ শতাংশ কমেছিল। দ্বিতীয় ঢেউয়ের মরণকামড়ের সময় অর্থনীতির কথা ভেবেই দেশ জুড়ে লকডাউনের পথে হাঁটেনি কেন্দ্রীয় সরকার। এ বার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মুখে আজ নতুন বছরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, করোনার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু করোনা ভারতের গতি রুখতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যের পরে সরকারের ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, তৃতীয় ঢেউ এলেও যে ফের পুরোপুরি লকডাউন হবে না, বছরের প্রথম দিনে তারই ইঙ্গিত মিলল। প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, “ভারত সব রকম সাবধানতা বজায় রেখে, সব রকম সতর্কতার সঙ্গে করোনার সঙ্গে লড়বে এবং নিজের জাতীয় স্বার্থও পূর্ণ করবে।” তাঁর বক্তব্য, ২০২২-এ দেশের আর্থিক বৃদ্ধির গতি আরও বাড়াতে হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে গত কয়েক দিন ধরে নিয়মিত ভাবে রাজ্যগুলিতে সতর্কবার্তা পাঠানো হচ্ছে এবং কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, তার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দিল্লি, কলকাতা-সহ বড় শহর ও একাধিক রাজ্যে ইতিমধ্যেই শপিং মল-সহ নানা ক্ষেত্রে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই খেটে খাওয়া মানুষের রুজিরোজগার নিয়ে চিন্তা বেড়েছে। কারণ গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রণ মানেই রোজগারে টান। এর পর লকডাউনের মতো অবস্থার অর্থ, রোজগার বন্ধ।
কোভিডের প্রথম ধাক্কায় গত বছরের এপ্রিল-জুনে জিডিপি-র প্রায় ২৪ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল। তার পর জুলাই-সেপ্টেম্বরেও সেই সঙ্কোচন বজায় ছিল। তার পর থেকে ফের সামান্য পরিমাণে আর্থিক বৃদ্ধি শুরু হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই ইতিবাচক বৃদ্ধির হার বজায় রয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৮ শতাংশের বেশি। তবে তা অনেকটাই গত বছর ওই সময় জিডিপি-র পরিমাণ কম ছিল বলে।
অর্থনীতি নিয়ে আশ্বস্ত করতেই প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, “আজ অর্থনীতির অনেক মাপকাঠিই প্রাক্-করোনার সময়ের থেকেও ভাল জায়গায় রয়েছে। আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের বেশি। ভারতে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি লগ্নি এসেছে। বিদেশি মুদ্রা রেকর্ড স্তরে রয়েছে। জিএসটি থেকে আয় পুরোনো রেকর্ড ভেঙে ফেলছে। রফতানি, বিশেষত কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা নতুন মাইলফলক তৈরি করছি।”
কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের বক্তব্য, তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় সাধারণ মানুষের মধ্যে রুটিরুজি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে তার ছাপ বাজারের চাহিদা থেকে নতুন লগ্নির উপরেও পড়বে। সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে আরও মজবুত করতে, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বাড়াতে অনেক কাজ হয়েছে। নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি হয়েছে। হাজার হাজার নতুন ভেন্টিলেটর আনা হয়েছে। হাসপাতাল, টেস্টিং ল্যাবের আধুনিকীকরণ হয়েছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা