ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রেক্ষাপটে তারা পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর সদস্য পদ পেতে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে।
নেটোর সচিবালয় থেকেও পরিষ্কার বলা হয়েছে উত্তর ইউরোপের এই দুই দেশ - যাদের একটির (ফিনল্যান্ড) সাথে রাশিয়ার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে - সদস্যপদের জন্য আবেদন করলে যত দ্রুত সম্ভব তা অনুমোদনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিন্তু তুরস্ক এতে বাগড়া দিচ্ছে। কিন্তু কেন?
নেটো জোটে নতুন কোন দেশকে সদস্য হিসাবে নিতে হলে জোটের ৩০টি সদস্য দেশকে একমত হতে হবে। প্রতিটি সদস্য দেশের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
কিন্তু যে দেশটির সেনাবাহিনী জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম - সেই তুরস্ক স্পষ্টভাবে বলে চলেছে নেটোতে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডকে নেয়ার প্রশ্নে তাদের চরম অস্বস্তি রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান শুক্রবার ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের বলেন তুরস্ক চায় না যে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন নেটো জোটে ঢুকুক। তিনি বলেন, “সুইডেন বা ফিনল্যান্ডকে নিয়ে যা হচ্ছে তা আমরা দেখছি। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের মনোভাব ইতিবাচক নয়।”
এরদোয়ান সেসময় গ্রিসের প্রসঙ্গ টেনে বলেন ১৯৫২ সালে নেটোতে গ্রিসের সদস্যপদ সমর্থন করে তুরস্ক ভুল করেছিল যে ভুল তিনি আর করতে চাননা। তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে বৈরিতা বহুদিনের এবং নেটো সদস্য হয়েও তারা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের ব্যাপারে তুরস্কের আপত্তি?
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দুটো দেশের ব্যাপারে তুরস্কের বহুদিনের অভিযোগ যে তারা তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী পিকেকেকে সমর্থন যোগায়, গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়।
এরদোয়ান বা তার মন্ত্রীরা অবশ্য তাদের উষ্মা চেপে রাখেননি। এরদোয়ান শনিবার তার স্বভাবসুলভ চাঁছাছোলা ভাষায় বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশগুলো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সরাইখানা, ... তাদের সমর্থন করা সম্ভব নয়।”
সন্ত্রাসী সংগঠন বলতে তিনি যে পিকেকে এবং সিরিয়ায় তাদের শাখা বলে পরিচিত কুর্দি মিলিশিয়া গোষ্ঠী ওয়াইপিজিকে বুঝিয়েছেন - তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
সুইডেনের ব্যাপারে তুরস্ক বিশেষভাবে খাপ্পা। কারণ, সুইডেন প্রকাশ্যে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে কুর্দি মিলিশিয়া ওয়াইপিজিকে সমর্থন দিয়েছে। এ কারণে গত বছর এপ্রিলে আঙ্কারায় সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল।
সুইডেনে পার্লামেন্টে এখন ছয়জন এমপি রয়েছেন যারা জাতিগত কুর্দি, এবং তারা কুর্দি ইস্যুতে সোচ্চার।
তবে আমেরিকা এবং নেটো জোটের অনেক সদস্য এখনও মনে করছে না যে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সদস্যপদের প্রশ্নে তুরস্ক শেষ পর্যন্ত ভেটো দেবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা