প্রচ্ছদ ›› আন্তর্জাতিক

শ্রীলঙ্কায় ডুবে গেছে রাসায়নিকবাহী জাহাজ, পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৩ জুন ২০২১ ১২:৫৯:০৭ | আপডেট: ৩ years আগে
শ্রীলঙ্কায় ডুবে গেছে রাসায়নিকবাহী জাহাজ, পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা

শ্রীলঙ্কা উপকূলে রাসায়নিক ভর্তি সিঙ্গাপুরে রেজিস্ট্রিকৃত এক্স-প্রেস পার্ল নামের কার্গো জাহাজটি ডুবে গেছে। সাগরে ছড়িয়ে পড়ছে জ্বালানি ট্যাংকে মজুদ থাকা শত শত টন রাসায়নিক তেল। এর ফলে বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

গত কয়েকদিন ধরেই যৌথভাবে শ্রীলঙ্কা ও ভারতীয় নৌবাহিনী জাহাজের আগুন নেভানো এবং এটি ভেঙে গিয়ে যেন ডুবে না যায় সেজন্য কাজ করছিল। কিন্তু উত্তাল সমুদ্র এবং মৌসুমী বাতাসের কারণে অভিযানটি ব্যহত হচ্ছিল। 

শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনীর মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ইন্ডিকা সিলভা বলেন, উদ্ধারকারীরা সাগরে দুষণ কমাতে ডুবে যাওয়ার আগে জাহাজটিকে টেনে গভীর সমুদ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জাহাজটির পেছনের অংশটি সরে গেছে। এটি এখন ডুবতে শুরু করেছে।

শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনীর মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ইন্দিকা সিলভা বলেন, ‘সামুদ্রিক দূষণ হ্রাস করার আগে জাহাজটিকে গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সেটি পূর্ববর্তী অঞ্চলে সরে গেছে। জাহাজটির পেছনের অংশ ভেঙে গেছে।’

দেশটির পরিবেশবিদ ডা. অজন্তা পেরেরা বিবিসিকে বলেন, ‘ডুবে যাওয়ার ফলে সাগরের পরিবেশে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ দেখা গেছে। বিপজ্জনক সব পণ্য, নাইট্রিক এসিড এবং অন্যান্য সব পণ্য এবং তেল নিয়ে জাহাজটি ডুবে গিয়ে সমুদ্রের পুরো তলদেশ ধ্বংস করে দেবে। গভীর সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়ার আগে জাহাজটি পরীক্ষা করে দেখতে ডুবুরিদের পাঠানো উচিত ছিল। পরিবেশগত সমস্যাগুলি এখন আমাদের পানিতে থাকবে।’

দেশের বেশ কয়েকটি প্রাচীন সৈকতগুলোর মধ্যে একটি নেগোম্বো শহরের নিকটবর্তী উপকূলীয় অঞ্চল। ইতোমধ্যে অঞ্চলটি তেল এবং ধ্বংসাবশেষ দূষণের মুখোমুখি হয়েছে।

দেশটির মৎস্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নেগোম্বো লেগুন এবং আশেপাশের অঞ্চলগুলি রক্ষার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পানাদুরা থেকে নেগোম্বোর পর্যন্ত মাছ ধরা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আঞ্চলিক ফিশিং ইউনিয়নের প্রধান জোশুয়া অ্যান্টনি জাহাজ ডোবার বিষয়ে আগে থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। তিনি বলেছিলেন, এটি আমাদের মৎস শিল্পের জন্য মারাত্মক আঘাত হতে পারে। আমরা সাগরে যেতে না পারলে জীবিকা নির্বাহ করতে পারি না।

লঙ্কান কর্মকর্তারা জানান, নাইট্রিক এসিড লিক হওয়া থেকেই জাহাজে আগুন লাগে। জাহাজের কর্মীরা ওই লিকের বিষয়ে জানতেন। বিষয়টি জাহাজটির মালিক কোম্পানি এক্স-প্রেস শিপিং নিশ্চিত করেছে। আগুন লাগার ঘটনার পর কাতার ও ভারত জাহাজটিকে নিজেদের সীমানায় প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। কিন্তু শ্রীলঙ্কা জাহাজটিকে নিজেদের সীমানায় প্রবেশের অনুমতি দেয়। যে কারণে দেশে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ হচ্ছে।

জাহাজের ক্যাপ্টেনসহ সব নাবিককে উদ্ধার করা হয়েছে। পরে সেটির জাহাজটির ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন লঙ্কান কর্মকর্তারা।

গত মঙ্গলবার জাহাজটির ক্যাপ্টেন এবং প্রকৌশলীকে ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ক্যাপ্টেন এবং প্রকৌশলীর শ্রীলঙ্কা ত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটির একটি আদালত।

জাহাজটি ভারতের গুজরাট রাজ্যের হাজিরা বন্দর থেকে গত ১৫ মে  যাত্রা করেছিল। কলম্বো বন্দরের উপকূলে নোঙর করা জাহাজটি বহনকারী একটি কন্টেইনার থেকে রাসায়নিক চুইয়ে পড়ে আগুন লাগার কথা জানানো হয়। ১৮৬ মিটার দীর্ঘ এই জাহাজটিতে এক হাজার ৪৮৬টি কন্টেইনারে ২৫ টন নাইট্রিক এসিডসহ আরও কিছু রাসায়নিক পদার্থ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র ছিল।