শ্রীলঙ্কায় প্রবল বিক্ষোভ ও সহিংসতা থামাতে সেনার হাতে বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হলো। দেখামাত্র গুলির নির্দেশ জারি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সপরিবারে নৌঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খবর ডয়েচেভেলের।
এদিকে, বিক্ষোভকারীরা শ্রীলঙ্কার উত্তর-পূর্বে ত্রিঙ্কোমালির অত্যন্ত সুরক্ষিত নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটির সামনে জড়ো হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কারণ এরকম একটা খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে মাহিন্দা রাজাপাকসে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে সেখানে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীকে জড়ো হতে দেখা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার প্রবল বিক্ষোভ ও সহিংসতায় উত্তাল হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কার্ফিউ উপেক্ষা করে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। মন্ত্রী ও নেতাদের অন্তত ১২টি বাড়ি ও সম্পত্তিতে আগুন ধরানো হয়েছে। রাজাপাকসে পরিবারের পৈত্রিক বাড়িতেও আগুন ধরানো হয়েছে।
সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপাকসের বাড়িতে জোর করে ঢুকতে চেয়েছে উত্তেজিত জনতা। প্রেসিডেন্টের অফিসের সামনেও নিরাপত্তা বাহিনী ও জনতার সংঘর্ষ হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সেনা নামানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সোম ও মঙ্গলবার মিলিয়ে অন্ততপক্ষে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হওয়ায় সরকার সেনা ও পুলিশের হাতে বিশেষ জরুরি ক্ষমতা দিয়েছে। তারা ওয়ারেন্ট ছাড়াই যে কোনো মানুষকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। গোলমাল বা সহিংসতা দেখলেই গুলি চালাতে পারবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোথাও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা বা জীবনহানির চেষ্টা হলেই নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কলম্বো সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর পরিমাণে সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নৌঘাঁটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার সকালেই রাজাপাকসের বাড়ি ঘিরে ফেলেছিল বিক্ষোভকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে একটি বাসেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সেনার এক উচ্চপদস্থ অফিসার সংবাদসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, রাজাপাকসের বাড়ি লক্ষ্য করে অন্তত ১০টি পেট্রোল বোমা ছোঁড়া হয়। বিক্ষোভকারীরা বাড়ির গেটও ভেঙে ফেলতে চেয়েছিল। সেনা তাদের উদ্ধার করে একটি নৌঘাঁটিতে নিয়ে গেছে।
এনডিটিভি-কে সূত্র জানিয়েছে, তাদের ত্রিঙ্কোমালির নৌঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হেলিকপ্টারে করে তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। কলম্বো থেকে ২৭০ কিলোমিটার দূরের ওই নৌঘাঁটির সামনেও বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। কলম্বো বিমানবন্দরে যাওয়ার প্রধান রাস্তাও তারা অবরোধ করে রেখেছে।
প্রেসিডেন্টের ইস্তফা দাবি
প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে আবার জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার পর মাহিন্দ্র রাজাপাকসে বলেছেন, তিনি জাতীয় সরকার গঠনের পথ প্রশস্থ করার জন্য পদ ছে়ড়েছেন। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল জানিয়ে দিয়েছে, তারা জাতীয় সরকারে যোগ দেবে না। তারা চায়, গোটাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করুন।
উইলসন সেন্টারের বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান সংবাদসংস্থা এএফপি-কে বলেছেন, ‘রেসিডেন্ট রাজাপাকসে ইস্তফা না দেয়া পর্যন্ত কেউই শান্ত হবে না। রাস্তায় নামা বিক্ষোভকারী বা প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব- সকলেই তার ইস্তফা চায়।’