ভারতে নয়, এশিয়ায় প্রথম এক বিরল ঘটনা ঘটেছে। ৬৫ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মাত্র ১২ বছরের এক শিশু সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। তার ফুসফুস প্রতিস্থাপনও করতে হয়নি।
লক্ষ্ণৌ থেকে উত্তর প্রদেশের এ শিশুকে আকাশপথে নেয়া হয়েছিল হায়দরাবাদে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাকে এক্সট্রাকরপোরাল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন (ইসিএমও) নামক লাইফ সোপোর্টে রাখা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ চার মাস জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে করতে সে এখন পুরোপুরি সুস্থ। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠেছে।
সুরাইয়া কুমারের এই সুস্থতাকে তার পিতামাতার জন্য বড়দিনের উপহার হিসেবে মনে করছেন অনেকেই।
আগস্টে তাদের সন্তান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে করোনা শনাক্ত হয়নি। ফলে নিউমোনিয়া হয়ে যায় সুরাইয়ার। তারপর থেকে তার পিতামাতার দুর্ভোগ আর দুশ্চিন্তার পড়ে যায়। তবু আশা নিয়ে তারা তাকে ভর্তি করেন হায়দরাবাদের কৃষ্ণ ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসে (কেআইএমএস)। সেখানেই তার সঙ্গে সাক্ষাত করে এনডিটিভি। সুস্থ হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো ফিজিওথেরাপি।
কেআইএমএসে ওই সময় নিজের ট্রেইনারের সঙ্গে ফিজিওথেরাপি নিচ্ছিল সুরাইয়া কুমার। এ সময় তার মা রেনু শ্রীবাস্তব আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, এ হাসপাতালের চিকিৎসক এবং প্যারামেডিকেল স্টাফদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা শুধু আমার ছোট্ট ছেলেটিকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন এমন নয়। তারা একই সঙ্গে আমাকে পূর্ণ জীবন দান করেছেন।
তার স্বামী রাজিব সরণ লক্ষ্ণৌতে একজন আইনজীবী। তিনি বলেছেন, ভারতের জনগণ জানেন যে, ডাক্তার এবং প্যারামেডিকরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। লক্ষ্ণৌতে কোনো ইসিএমও নেই। ইসিএমও সম্পর্কে অন্য অনেকের মতোই আমি জানতাম না। এটা আমার ছেলের জীবন রক্ষা করেছে। ভারতে এমন চিকিৎসক এবং স্টাফ থাকার জন্য আমি খুবই গর্বিত। আমার ছেলে যখন আইসিইউতে, তখন তারা অবিরাম তাদের ডিউটি পালন করে গেছেন।
আগস্টে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুরাইয়ার অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে।
তাই আকাশপথে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হায়দরাবাদে। সেখানে তাকে ভেন্টিলেটরে, পরে ইসিএমও’তে রাখা হয়। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে হার্ট-ফুসফুস বিষয়ক একটি মেশিনে রক্ত পাঠানো হয়। এই মেশিনটি শরীরের বাইরে স্থাপন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে পুরো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে সুরাইয়া কুমারের ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু তা ছাড়াই ৬৫ দিন আইসিইউতে রাখার পর পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে সে। সুরাইয়া কুমার এখনই বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
এর আগে ইসিএমও’তে ১০৯ দিন থাকার পর চেন্নাইয়ের ৫৬ বছর বয়সী একজন পুরুষ সুস্থ হয়েছে। তারও কোনো ফুসফুস প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হয়নি। তার নাম মুদিজ্জা। তখন চিকিৎসকরা তার বেঁচে থাকাকে একটি জীবন্ত মিরাকল হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।