করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ১০১ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন চন্দন মণ্ডল। এর মধ্যে ৬৮ দিনই ছিলেনে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে। এখানেই শেষ নয়। করোনা সংক্রমণে চন্দনের দু’টি ফুসফুসই ফুটো হয়ে গিয়েছিল। তবে করোনার সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছেন সেই চন্দনই। দীর্ঘ লড়াই শেষে করোনা জয় করেই বাড়ি ফিরেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের এই বাসিন্দা।
দীর্ঘ ১০১ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর শুক্রবার করোনা জয় করে বাড়ি ফেরেন চন্দন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ৩৯ বছর বয়সী চন্দন পেশায় একজন ব্যবসায়ী। করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৮ মে স্থানীয় সেবা নার্সিংহোমে ভর্তি হন চন্দন।
শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২৫ মে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয় চন্দনকে। এদিনই চন্দনের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে বলে জানান তার ভাই নন্দন মণ্ডল।
করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা না হলেও দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চন্দনের শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়তে থাকে। এরপর তাকে এইচডিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। কয়েক দিনের ব্যবধানে সেখান থেকে তাকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। কিন্তু চন্দনের শ্বাসকষ্ট সমস্যা বাড়তেই থাকে।
এরই মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা যায়, করোনা আক্রান্ত চন্দনের ফুসফুসে ছিদ্র ধরা পড়ে। এমন অবস্থায় গত ৩ জুন চন্দনকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ৯ অগস্ট পর্যন্ত টানা ৬৮ দিন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে ছিলেন চন্দন।
তাতেও রেহাই মেলেনি চন্দনের। ভেন্টিলেটরে থাকলেও চন্দনের দুটো ফুসফুসই ফুটো হয়ে যায়। সেই ফুটো দিয়ে বাতাস বেরিয়ে জমে যায় ফুসফুসের বাইরের পর্দায়। কেবল তাই নয়, ত্বকের নিচে টিস্যুতে বাতাস জমে চন্দনের শারীরিক অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে।
করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও চন্দনের ফুসফুসের সংক্রমণ থেকে যায়। এরপর করোনার সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের মতোই ‘পোস্ট কোভিড’ সমস্যার চিকিৎসা চলতে থাকে ৩৯ বছর বয়সী চন্দনের।
এমন অবস্থা থেকেও চন্দনের বেঁচে ফেরাকে মিরাকল হিসেবে দেখছেন চিকিৎসক দেবরাজ যশ। তার ভাষ্য, ‘এই অবস্থা থেকে বেঁচে ফেরাকে মিরাকল বলা যেতে পারে। তবে ওর বয়স কম হওয়ার জন্যই ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস নিয়েও সমানে লড়াই চালিয়ে যেতে পেরেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগীর ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা ছাড়া উপায় থাকে না।’
চন্দনের চিকিৎসায় চিকিৎসদের পাশাপাশি নার্সদের ভূমিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।
এদিকে ১০০ দিনের উপর হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফেরা চন্দনের বাড়িতে বইছে আনন্দের জোয়ার। তবে শারীরিক দুর্বলতা থাকায় এখনও হাঁটাচলা করতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে চন্দনের। চিকিৎসকদের দেওয়া পরামর্শ মেনে বাড়িতেই ফিজিওথেরাপি চলছে চন্দনের।
চন্দনের ভাই নন্দন বলেন, ‘আমার দাদা পুর্নজন্ম পেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে!’