প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

পেট্রোবাংলা-বিপিসির কাছে ৫,৩৭৩ কোটি টাকা পাবে চট্টগ্রাম কাস্টমস

মোঃ সাইদুর রহমান
১০ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৫৫:১৭ | আপডেট: ২ years আগে
পেট্রোবাংলা-বিপিসির কাছে ৫,৩৭৩ কোটি টাকা পাবে চট্টগ্রাম কাস্টমস

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কাছে শুল্ক হিসাবে এখনও ৫ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা পাবে চট্টগ্রাম কাস্টমস। এতো বড় অংকের পাওনা দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছে এ খাত সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্য অনুযায়ী, এলএনজি আমদানির বিপরীতে পেট্রোবাংলার বকেয়া রয়েছে ৫ হাজার ২২৭ দশমিক ৩২ কোটি এবং বিপিসির কাছে ১৪৫ দশমিক ৭২ কোটি টাকা।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ অক্টোবর এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কাস্টমস হাউস কমিশনার মোঃ ফয়জুর রহমান।

এ বিষয়ে ফয়জুর রহমান জানান, তারা পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বকেয়া পরিশোধের জন্য একাধিক চিঠি পাঠিয়েছেন। এমনকি টেলিফোনে তাদের সাথে যোগাযোগ করলেও এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কোনো বকেয়া পরিশোধ করেনি বলেও জানান তিনি।

এনবিআরের চিঠি দেয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এনবিআরকে চিঠি দিয়ে পেট্রোবাংলা ও বিপিসি থেকে টাকা আদায়ের জন্য অনুরোধ করেছি।’

ওই চিঠিতে ফয়জুর রহমান জানান, মহেশখালীর টার্মিনালে কার্গো থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আনলোড করে সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয়।

শুল্ক বিধি অনুসারে, এলএনজি আনলোড করার আগে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় বিল অফ এন্ট্রিসহ প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হয়। তবে এলএনজি আনলোড করার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও তারা বিল অফ এন্ট্রি এখনও জমা দেয়নি।

বিল অফ এন্ট্রি হচ্ছে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতির অংশ। এটি একটি বৈধ নথি যা আমদানিকারক বা কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এজেন্টরা আমদানিকৃত পণ্যের জন্য সরবরাহ করে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত শুল্ক হিসাবে ৫ হাজার ২২৭ দশমিক ৩২ কোটি টাকা পরিশোধ করেনি পেট্রোবাংলা।

এছাড়াও চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আমদানিকৃত কোনো পণ্যের জেনারেল ম্যানিফেস্টের (আইজিএম) বিপরীতে বিল অফ এন্ট্রি জমা দেয়নি। যার রাজস্বের পরিমাণ ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।

এতে আরও বলা হয়েছে, “এটি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস ডেটার স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম এবং আর্থিক ও রাজস্ব ব্যবস্থার শৃঙ্খলায় বাধা সৃষ্টি করছে।”

ওই চিঠিতে এনবিআরকে সার্বিক অবস্থা জানিয়ে পেট্রোবাংলা এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।

অন্যদিকে, এখনও বিপিসি প্রায় ১৪৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা বকেয়া শুল্ক পরিশোধ করতে পারেনি। এর মধ্যে বিপিসির উইং মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের কাছে ২৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির কাছে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা এবং পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কাছে ১১৬ কোটি ৭৩ লাখ ও ৯৩ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে।

এদিকে মোট জাতীয় বাজেটের ৫০ শতাংশ প্রদান করে এনবিআর। এর মধ্যে এনবিআরের সংগ্রহে প্রায় ২০ শতাংশ অবদান রাখে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। কিন্তু চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্র পরিচালিত সংস্থাগুলির বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতে না পারলে রাজস্ব আদায়ের ক্রমহ্রাসমান প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।

গত অর্থবছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এনবিআর সংগ্রহ করেছে ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস একাই রাজস্ব আদায় করেছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।

গত অর্থবছরে ৬৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫৯ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।

চলতি অর্থবছরে এর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা । কিন্তু এ অর্থবছরে, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলি থেকে রাজস্ব আদায় হ্রাস পেয়েছে, যদিও বেসরকারি খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ অপরিবর্তিত রয়েছে।

আরও পড়ুন - সাপ্তাহিক লেনদেনে আইটি খাতের আধিপত্য