প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

৩ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ লুকিয়েছে ইসলামী ব্যাংক

মেহেদী হাসান
০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:১৭:৫৫ | আপডেট: ২ years আগে
৩ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ লুকিয়েছে ইসলামী ব্যাংক

৩ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ গোপন করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ বিতরণে অনিয়ম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয় শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকটি। তদন্তে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড, এম/এস মুরাদ এন্টারপ্রাইজ এবং ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সে ঋণ বিতরণে অনিয়ম পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমনকি ঋণের অর্থও সঠিকভাবে ব্যবহার হয়নি।

আরও পড়ুন- একদিনে ৪ হাজার কোটি টাকার তারল্য সুবিধা নিলো ৫ ইসলামী ব্যাংক

সম্প্রতি এমন অনিয়ম শনাক্তের পর আইবিবিএলকে এসব ঋণ খেলাপি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে ঋণ পুনরুদ্ধারসহ ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার পর আইবিবিএলকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি দ্য বিজনেস পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ মেজবাউল হক।

আরও পড়ুন- বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে ইসলামী ব্যাংক

তিনি জানান, আইবিবিএলকে মন্দ ঋণগুলোর যথাযথ শ্রেণিবিন্যাস করে সমন্বয় করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে আইবিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মওলার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি ফোন ধরেননি।

আইবিবিএলের নথি অনুযায়ী, খাতুনগঞ্জ কর্পোরেট শাখা থেকে সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসকে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা, চাক্তাই শাখা থেকে মুরাদ এন্টারপ্রাইজকে ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা এবং জুবিলি রোড থেকে শাখা ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সকে ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের শুরু থেকে এসব ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ঋণের টাকা পরিশোধ হয়নি।

আরও পড়ুন- ‘আতঙ্কে’ ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা তুলছেন আমানতকারীরা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, এই বিশাল অংকের ঋণগুলো ব্যাংকিং নিয়ম উপেক্ষা করে দেয়া হয়েছে। কারণ এই কোম্পানিগুলো এসব ঋণের যোগ্য নয়।

গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে আইবিবিএলের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ৩ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার মন্দ ঋণসহ মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৮ হাজার ৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন- পর্যবেক্ষক প্রত্যাহারে আর্থিক অনিয়ম বেড়েছে ইসলামী ব্যাংকে?

গত বছরের শেষের দিকে কিছু নথি ফাঁস হওয়ার পর বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১১ ভুতুড়ে ও নামহীন কোম্পানিকে ৯ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে ইসলামী ব্যাংক।

এরপরই ইসলামী ব্যাংক পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ওইসব কোম্পানিকে ৯ হাজার ১৩৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ স্থগিতের নির্দেশ দেয়। ডিসেম্বরে ব্যাংকটিতে একজন পর্যবেক্ষকও নিয়োগ দেয়া হয়।

আরও পড়ুন- দুই ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

সম্প্রতি অনেক গ্রাহক আমানত তুলে নেয়ায় দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংকটি তারল্য সংকটের মুখোমুখি হয়। এরপর ঘাটতি মেটাতে বিশেষ বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নেয়।

শুধু আইবিবিএল নয় আরও চারটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডেও তারল্য সংকট দেখা দিয়েছিল। পরবর্তীতে ব্যাংকগুলোকে ৬ হাজার ৭৯০ কোটি টাকার বিশেষ তারল্য সহায়তা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ এই পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডার।