জলবায়ুকেন্দ্রিক অভিবাসন মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই শক্তিশালী বৈশ্বিক পদক্ষেপের প্রয়োজন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) যৌথভাবে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন বিষয়ক নীতি সংলাপের আয়োজন করে। এতে আশঙ্কা প্রকাশ করেন দেশী-বিদেশী আলোচকরা।
সংলাপে সরকার, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন- দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে ক্যালিফোর্নিয়ায়, জরুরি অবস্থা ঘোষণা
সংলাপের উদ্দেশ্য ছিল, জলবায়ু পরিবর্তন-অভিবাসন সংক্রান্ত বৈশ্বিক এজেন্ডাকে আরও গতিশীল করা। এছাড়া মিশরের শারম-এল-শেখ শহরে আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে অভিবাসন, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে যাতে বাংলাদেশ নেতৃত্বে দিতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন বলেন, জলবায়ু অভিবাসী ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গাফিলতি থাকা ঠিক না। তিনি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গতিধারা বজায় রাখার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য একটি শালীন জীবনযাত্রার অবস্থা গড়তে সরকার যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, তা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন- ডি-৮ সম্মেলনে খাদ্য, জ্বালানি ও বাণিজ্যে জোর দেয়া হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নিরলস কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ধীরে ধীরে জলবায়ু-সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ও প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা তৈরির মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মুখ খুলছে।
নীতি সংলাপের সূচনা বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন জলবায়ু পরিবর্তের কারণে সৃষ্ট অভিবাসন সমস্যা বিশ্বব্যাপী উত্থাপনে বাংলাদেশের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের মতো দুর্বল দেশগুলোর পর্যাপ্ত অর্থ ও প্রযুক্তি প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন- প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবজাতির অর্ধেক চরম বিপদে: গুতেরেস
প্যারিস চুক্তির আলোকে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ২° সে. সেলসিয়াস-এর নিচে সীমিত করার লক্ষ্য পূরণের জন্য শক্তিশালী বৈশ্বিক পদক্ষেপের প্রয়োজন। সেই সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং নীতিগুলিতে জলবায়ু অভিবাসনকে একীভূত করা দরাকার।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন ও অভিযোজনে সমন্বিত পদক্ষেপ, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নীতি ও পরিকল্পনা জলবায়ু অভিবাসন মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে৷ আজকে নেয়া নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অভিবাসী এবং তাদের পরিবারের জন্য কতটা সহায়ক তা নির্ধারণ করবে।’
আরও পড়ুন- দুর্যোগ মোকাবিলায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক
আলোচনায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর ডেপুটি মহাপরিচালক উগোচি ডেনিয়েলস বলেন, ‘আইওএম অভিবাসন নীতিমালা এবং প্রায়গিক জ্ঞান সহায়তা প্রদানে বিশেষায়িত একটি প্রতিষ্ঠান। অভিবাসন, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক কৌশল ২০২১-২০৩০ এর প্রতিফলন হিসেবে জলবায়ু অভিবাসন নিয়ে আইওএম আহ্বায়ক সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনে যারা ইতোমধ্যে অভিবাসন করেছেন, করতে আগ্রহী এবং যারা অভিবাসন করেননি, সকলের জন্য সমাধান আনয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আইওএম।
আরও পড়ুন- ২০৩০ সাল পর্যন্ত গাছ না কাটার আহ্বান বনমন্ত্রীর
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস বলেছেন, ‘জলবায়ু অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় বাংলাদেশে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহায়ক অবকাঠামো (ইউএনএসডিসিএফ) ২০২২-২০২৬-এ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়েছে। জাতিসংঘ পরিবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূলতা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ।’