প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

প্রিয়জনের শেষ অংশটুকুই যেন পাওয়ার আশা

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ জুন ২০২২ ১২:৪৭:৪৭ | আপডেট: ৩ years আগে
প্রিয়জনের শেষ অংশটুকুই যেন পাওয়ার আশা

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ডিএনএ বুথের সামনে বাড়ছে ভিড়। হাসপাতালে-হাসপাতালে খোঁজ করে না পেয়ে এখানেই যেন প্রিয়জনের শেষ অংশটুকু খুঁজে পাওয়ার আশায় ছুটে আসছেন সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিখোঁজদের স্বজনরা। হয়তো জীবিত কিংবা মৃত পাবেন এই আশায়।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় নিহতদের স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে সংস্থাটির ফরেনসিক বিভাগ। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে নির্ধারিত বুথে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সকাল থেকেই সেখানে ভিড় করছেন নিহতদের স্বজনরা। তাদেরই একজন তৈয়বা সুলতানা।

নিখোঁজ ভাই সোয়াইব উদ্দিনের (২২) খোঁজে ডিএনএ নমুনা বুথের সামনে আহাজারি করছেন তিনি।

আরও পড়ুন- ৩৬ ঘণ্টা পেরোল কনটেইনার ডিপোর আগুন

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী প্রেমবাজার এলাকায়। ভাই সোবাইব বিএম কনটেইনার ডিপো হোটেলে ৫ বছর ধরে কাজ করেন। বিস্ফোরণের সময় সে ফেসবুকে লাইভে ছিল। এরপর তার ফোনে কল গেলেও এখন আর ফোন যাচ্ছে না। আমার স্বামীও একই ডিপোতে কাজ করে। কিন্তু সেদিন তিনি ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসেন।’

ডিএনএ নমুনা দেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দিইনি। আমার আরেক ভাই নমুনা দিয়েছে।’

আরও পড়ুন- মরদেহ শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করছে সিআইডি

চট্টগ্রামের আনোয়ারা এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার সন্তান রনির হদিস চাই। আমি তার খোঁজে এদিক-ওদিক ছুটছি। ওর মা না খেয়ে বাড়িতে পড়ে আছে। ছেলেকে না পেলে তাকেও বাঁচাতে পারবো না।’

নোয়াখালী সদর উপজেলা থেকে ভাইয়ের খোঁজে এসেছেন আতিকুল আলম। তিনি বলেন,‘ আমার ভাই সৈয়দুল আলম (৪৫) এখানে কনটেইনার অপারেশন ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। সৈয়দুলের ফোনে এখনো ফোন যাচ্ছে। আমার ধারণা আমার ভাই বেঁচে আছে। না হলে তার ফোন চালু থাকবে কেন? ফোন নম্বরটি সিআইডিকে দিয়েছি।’

এদিকে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নিহত ৪৯ জনের মধ্যে ২৪ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে নগর পুলিশের সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, নিখোঁজ স্বজনদের ডিএন নমুনা নিচ্ছে। আশা করছি, আমরা দ্রুত শনাক্ত করতে পারবো। আর শনাক্তহীন মরদেহগুলো মর্গে রাখা আছে। যেগুলো শনাক্ত হয়েছে সেগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সোমবার নতুন করে আর মরদেহ আসেনি বলেও জানান তিনি।

এদিকে নিহত ৪৯ জনের মধ্যে মাত্র ২৪ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।

তারা হলেন, কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের নাসিং অ্যাসিস্ট্যান্ট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ভোলার দক্ষিণ বালিয়ারা এলাকার হাবিবুর রহমান, প্রাণ গ্রুপের শ্রমিক রবিউল আলম, বাশঁখালী চনুয়ার মমিনুল হক, বাশঁখালীর মহিউদ্দিন, তোফায়েল আহমেদ, ফায়ার সার্ভিসের আলাউদ্দিন, নোয়াখালীর মুহাম্মদ সুমন, যশোরের ইব্রাহীম হোসেন, দাগনভুঁইয়া এলাকার শাহাদাত উল্লাহ মজুমদার, সীতাকুণ্ডের আফজাল হোসেন, মঠবাড়িয়ার ফারুল জমাদার, চট্টগ্রামের হালিশহরে মো. হারুন, মৌলভীবাজার এলাকার মো. নয়ন, রাঙ্গামাটির নিপন চাকমা, ফায়ার সার্ভিসের রানা মিয়া, রমজান আলী, রিদুয়ান মাহমুদ, তৌহিদ হোসেন, খুলনা ফায়ার সার্ভিসের শাকিল তরফদার, ফেনী সদর ফায়ার সার্ভিসের সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সবুজ, বাঁশখালী পুইঁছড়ি এলাকার নাজিম উদ্দিম রুবেল ও রাঙ্গামাটি এলাকার মিন্টু দেওয়ান।