সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকের সংকটের মধ্যে তারল্য সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারল্য ঘাটতি মেটাতে এ ঘোষণার ঠিক একদিন পরই মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা তারল্য সুবিধা নিয়েছে ৫টি শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক।
ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।
এর আগে সোমবার শরিয়াহ ভিক্তিক ব্যাংকগুলোর সংকট কাটাতে ‘ইসলামিক ব্যাংক লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (আইবিএলএফ)’ চালুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, ৫টি শরিয়াহ ভিত্তিক ইসলামি বন্ড সুকুকের বিপরীতে ৪ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা নিয়েছে।
বর্তমানে দেশে ১০টি ইসলামী ধারার ব্যাংক চালু রয়েছে। ব্যাংকগুলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ অন্তত ৬টি ব্যাংক বড় ধরনের তারল্য ঘাটতির মুখোমুখি হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে ক্রমবর্ধমান আমদানি অর্থ প্রদান এবং সাম্প্রতিক তারল্য সুবিধা অনিয়মের কারণে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে এর আগে তারল্যের ঘাটতি ছিলো না। কিন্তু এখন এই ব্যাংকগুলোও প্রচলিত ব্যাংকের সঙ্গে তারল্য ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ‘আতঙ্কে’ ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা তুলছেন আমানতকারীরা
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবের কারণে আমানতকারীরা এখন ব্যাংক থেকে ক্রমবর্ধমান তাদের অর্থ তুলে নিচ্ছেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ কমে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২ লাখ ১১ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা ছিলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রির প্রবণতা অন্যান্য ব্যাংকগুলোর তারল্যের উপর প্রভাব ফেলেছে। কারণ ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিক্রি করে অন্যান্য ব্যাংকগুলো থেকে দেশীয় মুদ্রায় সমপরিমাণ টাকা তুলে নেয়।
গত অর্থবছরের রিজার্ভে ব্যাংকগুলো থেকে রেকর্ড ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংকের তারল্য সুবিধার নীতি-
দেশের ব্যাংকিং খাতে সঙ্কটের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোমবার শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য সুবিধা দেওয়ার জন্য একটি নীতি চালু করেছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ‘ইসলামিক ব্যাংক লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (আইবিএলএফ)’ শিরোনামে একটি নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নির্দেশিকা অনুযায়ী, তারল্য সহায়তার মেয়াদ হবে ১৪ দিন। এই কার্যদিবসের মধ্যে শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলো তারল্য সুবিধা সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে পারবেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে চলতি হিসাব রক্ষণাবেক্ষণকারী শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোও আইবিএলএফের জন্য আবেদন করতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগকারী হিসেবে ‘মুদারাবা চুক্তির’ অধীনে ব্যাংকগুলোকে তারল্য সুবিধা প্রদান করবে। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সম্মত লাভ শেয়ারিং রেশিও (পিএসআর) পদ্ধতির অধীনে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক হিসাবে থাকবে। সেই সাথে আইবিএলএফ লাভের হার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর তিন মাসের মুদারাবা মেয়াদী আমানত রসিদের (এমটিডিআর) সমান হবে।
তারল্য সুবিধাদাতারা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের এবং ফর্মের মাধ্যমে মতিঝিল অফিসের সিকিউরিটিজ বিভাগে (আইবিএলএফ) এ আবেদন করতে পারবেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিলাম কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইবিএলএফ প্রদান করা হবে।